কেনিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভে ফের রক্তপাত, পুলিশের গুলিতে নিহত ১১

গণতন্ত্রপন্থি ‘সাবা সাবা’ আন্দোলনের ৩৫তম বার্ষিকীতে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে ফের রক্তাক্ত হলো বিক্ষোভ। মঙ্গলবার (৭ জুলাই) দেশটির বিভিন্ন শহরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালায় পুলিশ। এতে অন্তত ১১ জন নিহত ও ৫২ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঘটনার দিনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানায়, নাইরোবির কাংগেমি এলাকায় পুলিশ গুলি চালায়। এক বিক্ষোভকারীকে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় নিথর হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। একই এলাকায় ইগল নার্সিং হোমে ছয়জনকে ভর্তি করা হলে, তাদের মধ্যে দুইজন হাসপাতালে মারা যান। এছাড়া কেনিয়াট্টা ন্যাশনাল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তারা ২৪ জন আহতকে চিকিৎসা দিচ্ছেন।
গত মাসে পুলিশ হেফাজতে জনপ্রিয় ব্লগার ও শিক্ষক আলবার্ট ওজওয়াং নিহত হন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই কেনিয়ার তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সরকারের প্রতি গভীর ক্ষোভ তৈরি হয়।
ওজওয়াংয়ের মৃত্যুর ঘটনায় তিনজন পুলিশসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। তবে অভিযুক্ত সবাই আদালতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন।
সরকারি মানবাধিকার সংস্থা কেনিয়া ন্যাশনাল কমিশন অন হিউম্যান রাইটস (KNCHR) জানিয়েছে, বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের পোশাকবিহীন সদস্যরা হুডি পরে অচিহ্নিত গাড়িতে চলাচল করছিলেন, যা আদালতের নির্দেশনার পরিপন্থী। KNCHR আরও অভিযোগ করে, নাইরোবি ও এলডোরেট শহরে সশস্ত্র গ্যাং ও পুলিশের যৌথ তাণ্ডব দেখা গেছে, যারা চাবুক ও চাপাতি নিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালিয়েছে।
৭ জুলাই কেনিয়ার ইতিহাসে ‘সাবা সাবা দিবস’ নামে পরিচিত। ১৯৯০ সালের এই দিনে দেশটিতে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল। এই আন্দোলনের চাপেই ১৯৯২ সালে প্রথমবারের মতো বহুদলীয় নির্বাচন হয়।
এবারের আন্দোলন শুরু হয় ২০২৪ সালের জুনে, যখন সরকার ট্যাক্স বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। এরপর তা রূপ নেয় দুর্নীতি, পুলিশি সহিংসতা এবং নিখোঁজ বিরোধীদের বিরুদ্ধে বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলনে।
কেনিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিপচুম্বা মুরকমেন আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান জানান দিয়ে বলেন, “শান্তিপূর্ণ মিছিলে অনুপ্রবেশ করে যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, তাদের মোকাবেলায় নিরাপত্তা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে।”
তিনি পূর্বে বিক্ষোভকে ‘অসন্তোষের ছদ্মবেশে সন্ত্রাস’ বলেও অভিহিত করেছিলেন।
নাইরোবি ও আশপাশে কড়া নিরাপত্তা, শহর অচল
নাইরোবির প্রধান প্রবেশপথগুলো পুলিশ অবরোধ করে রাখে
শহরের ভেতর যান চলাচল সীমিত করা হয়
অধিকাংশ স্কুল ও অন্তত একটি শপিং মল বন্ধ রাখা হয়
বিক্ষোভকারীরা পায়ে হেঁটে শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়
বিভিন্ন শহরে (নিয়েরি, এমবু, নাকুরু) ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ
নাকুরুতে ঘোড়ায় চড়া পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে।
বিক্ষোভ দমনকালে ব্যাপক গুলি চালানো, লাশ পড়ে থাকা, সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি এবং সরকারের কঠোর ভাষ্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, “ব্লগার হত্যাকে কেন্দ্র করে আন্দোলন যেভাবে গণআন্দোলনে রূপ নিয়েছে, তা শুধু করনীতির বিরুদ্ধে নয়, বরং শাসনব্যবস্থার গভীর সংকটের প্রতিচ্ছবি।”