১৩০ বছর বাঁচার ইচ্ছা দালাই লামার, জন্মদিনে জানালেন আত্মত্যাগের বার্তা

তিব্বতী বৌদ্ধদের আধ্যাত্মিক নেতা ১৪তম দালাই লামা তেনজিন গিয়াতসো তার ৯০তম জন্মদিনে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, “আমি আরও ৪০ বছর, অর্থাৎ ১৩০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে চাই।” ভারতের হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় শনিবার (৬ জুলাই) আয়োজিত জমকালো জন্মদিন অনুষ্ঠানে ভক্তদের উদ্দেশে এ কথা বলেন তিনি।
দালাই লামা বলেন, “আমি এ পর্যন্ত বৌদ্ধ ধর্ম এবং তিব্বতের সব প্রাণীর যথাসাধ্য সেবা করেছি। তবে এখানেই থেমে যেতে চাই না—আমি এখনো বহু প্রাণীর উপকার করতে চাই। তাই আমি আরও দীর্ঘ জীবন কামনা করি।”
ধর্মশালার মন্দির প্রাঙ্গণে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেন হাজারো তিব্বতী ভক্ত, ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, মার্কিন কূটনীতিক এবং হলিউড অভিনেতা রিচার্ড গিয়ার। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও দালাই লামাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
জন্মদিন উপলক্ষে দালাই লামা তার এক বিবৃতিতে বলেন, “আমি একজন সাধারণ বৌদ্ধ ভিক্ষু মাত্র। মানবিক মূল্যবোধ এবং ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রচারে আমি আজীবন কাজ করে যাব।”
এ বছরের জন্মদিন ছিল আরও একটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ। আগে থেকেই ঘোষণা ছিল, দালাই লামা তার উত্তরসূরি প্রসঙ্গে কিছু বলবেন। যদিও আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না এলেও, তিনি আগেই জানিয়েছিলেন—মৃত্যুর পর তিনি পুনর্জন্ম নিয়ে ফিরে আসবেন, এবং তার অলাভজনক সংস্থা গাদেন ফোড্রাং ট্রাস্ট-ই একমাত্র উত্তরসূরি নির্ধারণে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হবে।
তবে চীন বিষয়টিকে ভিন্নভাবে দেখে। বেইজিং স্পষ্ট করে বলেছে—দালাই লামার উত্তরসূরি চীনা সরকারের অনুমোদন ছাড়া গ্রহণযোগ্য হবে না। দীর্ঘদিন ধরেই চীন দালাই লামাকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ হিসেবে অভিহিত করে আসছে। অথচ দালাই লামা নিজের অবস্থানে অনড়—তিনি চীনের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে তিব্বতের স্বায়ত্তশাসন ও ধর্মীয় স্বাধীনতা আদায়ের ‘মধ্যপন্থা নীতি’ অনুসরণ করছেন।
১৯৫৯ সালে চীনা শাসনের বিরুদ্ধে একটি ব্যর্থ বিদ্রোহের পর দালাই লামা ভারতে আশ্রয় নেন। সেই থেকে তিনি ধর্মশালায় নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। তার সঙ্গে প্রায় এক লাখ তিব্বতী ভারতে চলে আসেন।
জন্মদিনে আত্মত্যাগ ও শান্তির বার্তা
দালাই লামা বলেন, “তিব্বত হারিয়ে আমরা আজ নির্বাসিত, কিন্তু আমি ধর্মশালা থেকেই প্রাণিকুল ও ধর্মের সেবা করে যেতে চাই। যেখানেই থাকি না কেন, মানবতা ও শান্তির পক্ষে কাজ করাই আমার অঙ্গীকার।”