‘দ্রুত সময়ের মধ্যে গণহত্যার বিচার ও আ.লীগ নিষিদ্ধ করতে হবে’

জুলাই মঞ্চের ৫ম ও শেষ শহীদি মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৯ এপ্রিল) যাত্রাবাড়ী থানার সামনে বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে এই শহীদি মার্চ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সংহতি জানিয়ে গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ বলেন, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বারবার সংস্কারের কথা বলছে। তারা গণহত্যার বিচার ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করে কীসের সংস্কার করছে এটা জনগণের প্রশ্ন। এই সরকারের প্রথম এবং প্রধান কাজ হলো গণহত্যার বিচার ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা, আর এটাই হবে বড় সংস্কার। সংস্কারের নামে টালবাহানা না করে দ্রুত সময়ের মধ্যে গণহত্যার বিচার ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে। জুলাই মঞ্চ গত দুই মাস ধরে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে গণহত্যার বিচারের দাবিতে।
সবার প্রতি গণহত্যার বিচারের দাবিতে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এই যাত্রাবাড়ী এলাকার মানুষের যে ভূমিকা ছিলো তা অনস্বীকার্য। এই এলাকার মানুষ বুলেটের সামনে জীবনের মায়াত্যাগ করে তারা হাসিনার পতন নিশ্চিত করেছে। ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ নিতে পারলেও যাত্রাবাড়ী এলাকা নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি। এই এলাকায় আওয়ামী প্রশাসন সবচেয়ে বেশি হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। এই হত্যা জড়িতরা অনেকে আটক হয়নি। সরকারের নমনীয়তা এবং সরকারের ভেতর থেকে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। কেননা এই সরকার যাদের জীবনের বিনিময়ে ক্ষমতায় বসেছে তারা সেই শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানী করছে, গণহত্যার বিচার ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করে। গণহত্যার বিচার ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যায় জড়িতরা রাস্তায় নামছে। প্রশাসনে থাকা আওয়ামী দুর্বৃত্তরা আওয়ামী লীগকে রাস্তায় নামার সুযোগ করে দিচ্ছে।
জুলাই মঞ্চের প্রতিনিধি সাকিব হোসেন বলেন, বর্তমান প্রশাসনে গণহত্যায় জড়িত বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের চাকরি এখনো বহাল রয়েছে, অধিকাংশকেই এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। গণহত্যার মামলাগুলোর কার্যক্রম এগোচ্ছে না। গণহত্যার শিকার শহীদ পরিবাররা বিচার নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন অবস্থায় রয়েছে। তারা মনে করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চলে গেলে তারা আর বিচার পাবে না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম এখনো আশাব্যঞ্জক অবস্থায় পৌঁছায়নি।
জুলাই মঞ্চের অন্যতম প্রতনিধি আরিফুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ৫৩ বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে দুর্বৃত্তায়ন গড়ে উঠেছে, ২৪ এর বিপ্লব তারও বিরুদ্ধে বড় একটা বার্তা। অথচ রাষ্ট্রে সেসব সমস্যা রেখে এখন কেবল অতীতের মতো একটা নির্বাচনের জন্য সবাই উঠে পড়ে লেগেছে। আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, গণহত্যার বিচার, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল এবং প্রশাসনের হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় এনে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করার আগে কোনো নির্বাচন দেওয়া হলে তা হবে ২৪ এর শহীদদের প্রতি অবিচার।
আরেক প্রতিনিধি অর্নব হোসাইন বলেন, আমরা দেখতে পেয়েছি ডিএমপি কমিশনার অফিস থেকে গত ৯ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে সব থানায়। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, জুলাই অভ্যুত্থানের হত্যা মামলার আসামিদের ধরার আগে কমিশনার অফিসে অবহিত করতে। আমরা ডিএমপি কমিশনার অফিস থেকে আসা এই ধরনের কাজকে ফ্যাসিবাদের পাহারাদার হিসেবে দেখছি। এই প্রজ্ঞাপনের পরে ১৭ এপ্রিল আওয়ামী লীগ যাত্রাবাড়ী এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেছে। এর থেকে প্রমাণিত হয় আওয়ামী লীগ এখনো তাদের কিলিং মিশন আবারও বাস্তবায়ন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
এ সময় যাত্রাবাড়ী এলাকায় নিহত ও আহতদের স্বজনরা সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। তারা শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবি করেন।