চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার রিয়াদকে ঘিরে সরগরম নোয়াখালীর নবীপুর

চাঁদাবাজির অভিযোগে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদকে নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে তার গ্রামের এলাকা নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নে। একসময়ের দিনমজুরের সন্তান রিয়াদ হঠাৎ করে পাকা ভবন নির্মাণ, দামি বাইকে ঘোরা এবং বিত্ত-বৈভব প্রদর্শন শুরু করায় নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয়দের মধ্যে।
রিয়াদ নবীপুর গ্রামের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তার বাবা আবু রায়হান এক সময় রিকশা চালাতেন, মা নাজমুন নাহার অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। অর্থকষ্টে বেড়ে ওঠা এই তরুণ এসএসসি ও এইচএসসি পাসের পর ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পান। সেখান থেকেই যুক্ত হন কোটাবিরোধী আন্দোলন এবং পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে। সরকারের পতনের পর ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ’-এর অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবে তাকে সক্রিয়ভাবে মাঠে দেখা যায়।
গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, রিয়াদের নির্মাণাধীন একতলা পাকা ভবনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রায় ৯০০ থেকে ১,০০০ বর্গফুট আয়তনের এই ভবনের নির্মাণ ব্যয় প্রায় ২০–২৫ লাখ টাকা হতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় একটি প্রকৌশল সূত্র। ইতোমধ্যে ছাদ ঢালাইসহ ১২–১৫ লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়ে গেছে।
রিয়াদের বাবা জানান, তার ছেলেই বাড়ির নির্মাণে সহযোগিতা করেছে। এবারের কোরবানিতেও তার আত্মীয়দের সহায়তায় তারা ৫৬ হাজার টাকার একটি গরু কোরবানি দিয়েছেন। অন্যদিকে রিয়াদের মা জানান, সরকার থেকে পাওয়া ঢেউটিন বিক্রি করে, ‘আল-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন’ থেকে পাওয়া ৫০ হাজার টাকা এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে তারা বাড়ির কাজ শুরু করেছেন। তবে স্থানীয়রা এসব দাবিকে বিশ্বাস করতে পারছেন না।
স্থানীয় এক বন্ধু অভিযোগ করে বলেন, রিয়াদ সবসময় বড় ছাত্রনেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতো এবং সেই সম্পর্ক থেকেই সুবিধা নিতো। তার দাবি, রিয়াদ ‘জুলাই আন্দোলন’কে কাজে লাগিয়ে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল আলিম বলেন, জুলাই আন্দোলনের পর থেকেই রিয়াদের জীবনধারায় বড় পরিবর্তন আসে। এখন দামি বাইক ব্যবহার করছেন, গ্রামের বাড়িতে পাকা ভবন গড়ছেন—সবই যেন আচমকা ঘটে গেছে।
এক দোকানদার বলেন, রিয়াদ ছাত্র অবস্থায় মানুষের সাহায্যে চলতো। অথচ এখন তার আচার-আচরণ, ব্যয়বহুল জীবনযাপন ছাত্র রাজনীতির মৌলিক চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
রিয়াদের আরেক সহপাঠী শাহাদাত হোসেন বলেন, সে সব সময় সচেতনভাবে চলাফেরা করতো যাতে কেউ বুঝতে না পারে তার পেছনের বাস্তবতা। সে কাদের মির্জার সঙ্গে ছবি তুলে নিজেকে নেতা হিসেবে তুলে ধরতো। বর্তমানে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টও বন্ধ।
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন রিয়াদ। চাঁদাবাজির ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়। এছাড়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকেও তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সব শাখা কমিটির কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, ফেসবুকে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তোলা রিয়াদের ছবিগুলো এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরছে। এসব ছবি নিয়েও শুরু হয়েছে নতুন করে আলোচনা—আসলে কে বা কারা ছিল তার পেছনে?