শ্রাবণের শোকগাথা: রবীন্দ্র প্রয়াণে শ্রদ্ধার্ঘ্য

২২ শ্রাবণ, বুধবার। আজ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮৪তম প্রয়াণবার্ষিকী। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে, কলকাতার জোড়াসাঁকোর পৈতৃক বাড়িতে চিরবিদায় নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই মহান সাধক।
মহাকালের চেনাপথ ধরে প্রতিবছর ফিরে আসে ২২ শ্রাবণ। তবে এই দিনটি বিশ্বজুড়ে রবীন্দ্র-অনুরাগীদের কাছে কেবল তারিখ নয়—একটি শূন্যতা, এক অপার বেদনার প্রতীক। যে দিন কবির জীবন ও সাহিত্য সাধনার পরমার্থ মিলেছিল মহাশূন্যে। তাঁর অমর সৃষ্টিসম্ভার প্রতিনিয়তই স্মরণ করিয়ে দেয়—তিনি কেবল কবি নন, এক সমগ্র জীবনদর্শনের নাম।
মাত্র আট বছর বয়সে লেখালেখির সূচনা করা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার দীর্ঘ সাহিত্যজীবনে সৃষ্টি করেছেন কাব্য, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনি, চিঠিপত্র, শিশুসাহিত্যসহ বাংলা সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি শাখায় অনন্য দৃষ্টান্ত। গীতিকার ও সুরস্রষ্টা হিসেবে তিনিই ছিলেন নিজের শ্রেষ্ঠ প্রতিদ্বন্দ্বী। বাংলা গানে রবীন্দ্রসঙ্গীত এককালে যেমন নবজাগরণের অনুরণন, আজও তেমনি প্রেরণার ধ্রুবতারা।
শুধু সাহিত্যেই নয়—শিক্ষা, সমাজকল্যাণ ও সাংগঠনিক কর্মেও রবীন্দ্রনাথ রেখেছেন অসামান্য অবদান। কৃষকদের কল্যাণে চালু করেছিলেন কৃষিঋণব্যবস্থা, আর শিক্ষার নতুন দর্শনে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিশ্বভারতীর মতো প্রতিষ্ঠান। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে তিনি বর্জন করেছিলেন ‘নাইট’ উপাধি, হয়ে উঠেছিলেন এক নীরব প্রতিবাদের প্রতীক।
কলকাতার খ্যাতনামা ঠাকুর পরিবারের চৌদ্দতম সন্তান রবীন্দ্রনাথ জন্মগ্রহণ করেন ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ, জোড়াসাঁকোর সেই ঐতিহাসিক বাড়িতে। শৈশব থেকেই এক সাংস্কৃতিক জগতে বড় হয়ে ওঠা রবীন্দ্রনাথ, বাংলার পদ্মা, মেঘনা, যমুনায় নৌভ্রমণের মধ্য দিয়ে প্রত্যক্ষ করেছিলেন জনজীবনের বাস্তবতা ও প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য—যা পরবর্তীকালে প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর সাহিত্যজগতে।
১৯১৩ সালে “গীতাঞ্জলি” কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যা বাংলা সাহিত্যকে পৌঁছে দেয় বিশ্বসাহিত্যের শীর্ষ আসনে। তাঁর গান আমাদের জাতীয় সংগীত, মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর রচনাই ছিল সাহস ও প্রেরণার উৎস। এমন একজন ব্যক্তিত্ব বাংলা তথা বিশ্বের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে চিরকালীন।
বিশ্বকবির প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে আজ (৬ আগস্ট বুধবার) সন্ধ্যা ৭টায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে ছায়ানট মিলনায়তনে আয়োজিত হচ্ছে ছায়ানটের স্মরণানুষ্ঠান। এছাড়া আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বাংলা একাডেমির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিকেল ৪টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে শুরু হবে এই আয়োজন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণবার্ষিকী শুধু তাঁর অনুপস্থিতিকে নয়, বরং তাঁর উপস্থিত সৃষ্টিকে বারবার নতুন করে উপলব্ধির দিন। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় তিনি বাঙালির হৃদয়ে চিরঞ্জীব।