‘জুলাইয়ের ৩৬ দিন’: শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘তাদের যেখানে পাও গুলি করো’

গত বছরের জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় বাংলাদেশে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমনে সরাসরি প্রাণঘাতী হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা—এমনটাই দাবি করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। সম্প্রতি তাদের প্রকাশিত ‘জুলাইয়ের ৩৬ দিন’ নামক তথ্যচিত্রে শেখ হাসিনার বেশ কয়েকটি ফোনালাপ ফাঁস করা হয়, যার একটি ঘটে ১৭ জুলাই ২০২৪ সালে, সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে।
তথ্যচিত্র অনুযায়ী, শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঙ্গে ফোনালাপে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি জানতে চান। ইনান তাকে জানান যে হলগুলো অনেকটাই ফাঁকা হয়ে গেছে, তবে পুলিশের অভিযান এখনো প্রয়োজন। শেখ হাসিনা উত্তরে জানান যে তিনি আগেই নির্দেশ দিয়েছেন—যেখানে প্রয়োজন, যেভাবে দরকার, ব্যবস্থা নিতে।
এই নির্দেশের পরপরই ঢাকার বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ও আশপাশের এলাকায় দমন-পীড়ন আরও বেড়ে যায়। আন্দোলনের পেছনে সন্ত্রাসীরা কাজ করছে বলে মন্তব্য করেন হাসিনা এবং জানান, তাদের কোনো সুযোগ দেওয়া যাবে না। ইনান তখন হাসিনার বক্তব্যে সম্মতি জানান এবং বলেন, দলীয় কর্মীরা সরাসরি তার নির্দেশনা পেয়ে মাঠে নেমেছে।
আল জাজিরার দাবি, এসব ফোনালাপ সংগ্রহ করা হয়েছে শেখ হাসিনার নিজস্ব নজরদারি সংস্থা এনটিএমসি (NTMC)-এর গোপন রেকর্ডিং থেকে। তারা আগে থেকেই বিরোধী নেতাদের, এমনকি নিজেদের রাজনৈতিক মিত্রদের ওপর নজরদারি চালিয়ে আসছিল।
তথ্যচিত্রে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনার এই নির্দেশনার ফলেই ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় চালানো হয় ব্যাপক দমন-পীড়ন। এই সময় অন্তত ১,৪০০ জন নিহত ও ২০,০০০-এর বেশি মানুষ আহত হন বলে দাবি করে আল জাজিরা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ইতোমধ্যেই এসব ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হতে পারে।
আল জাজিরার ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট (I-Unit) ফোনালাপগুলো ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করেছে এবং নিশ্চিত করেছে যে এগুলো কোনোভাবেই কৃত্রিমভাবে তৈরি নয়।
এদিকে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই প্রতিবেদন অস্বীকার করা হয়েছে। তাদের দাবি, ফোনালাপগুলো উদ্দেশ্যমূলকভাবে সম্পাদনা ও বিকৃত করা হয়েছে।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, তথ্যচিত্রটি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া এক ঐতিহাসিক রাজনৈতিক মুহূর্তের আভ্যন্তরীণ দিক উন্মোচন করেছে, যা ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।