“পাঁচ মিনিট আগেও যাদের দেখেছি, তাদেরই পুড়ে যাওয়া শরীর দেখলাম” — ভয়াবহ মুহূর্তের বর্ণনায় শিক্ষক পূর্ণিমা দাশ

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের সামনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ভয়াবহ ঘটনায় নতুন নতুন তথ্য উঠে আসছে। এই মর্মান্তিক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে ছিলেন স্কুলটির শিক্ষক পূর্ণিমা দাশ, যিনি ঘটনার সময় ঘটনাস্থলেই ক্লাস নিচ্ছিলেন।
গত সোমবার (২১ জুলাই) বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন তিনি। মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকেই তাঁর স্ট্যাটাস শেয়ার করেছেন, মন্তব্য করেছেন, এবং মর্মাহত হয়েছেন তাঁর হৃদয়বিদারক বিবরণে।
পূর্ণিমা দাশ লেখেন—
“স্কুল ছুটি হয় দুপুর ১টায়। এরপর কোচিংয়ের জন্য কিছু ছাত্রছাত্রী স্কুলে ছিল, আর কেউ কেউ অভিভাবকদের জন্য অপেক্ষা করছিল। দুপুর ১টা ১০-১৫ মিনিটের দিকে হঠাৎ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান ক্র্যাশ করে হায়দার আলী ভবনে আগুন ধরে যায়।
আমি তখন ওই ভবনেরই করিডোর পার হয়ে টিচার্স রুমে যাচ্ছিলাম। মুহূর্তেই দেখি চারদিক দাউদাউ করে আগুন। বাচ্চারা দৌড়ে আসছে, তাদের শরীরে আগুন। আমি কিছু না ভেবে ওয়াশরুমে দৌড়ে গিয়ে পানি ঢালছি। এমন সময় এক শিক্ষক চিৎকার করে বললেন— ‘পূর্ণিমা, বের হন, দ্রুত।’
রুম থেকে বের হয়ে দেখি, করিডোরে শুধু আগুন আর আগুন। হঠাৎ দেখি, আমার একজন সহকর্মী পুড়ে যাওয়া শরীরে ছুটে এসে আমার পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়লেন। বললেন, ‘আমাকে বাঁচান। ’ আমি তখনও স্তব্ধ। কেউ একজন আমাকে জোরে টেনে বাইরে বের করে আনেন।
আমার বাচ্চাগুলোকে আমি পাঁচ মিনিট আগেও দেখে এসেছি। আর পাঁচ মিনিট পরেই তাদের পুড়ে যাওয়া শরীর দেখতে হলো। ভগবান এমন দিন কেন দেখালেন জানি না। আমি কেন অক্ষত রইলাম, তাও জানি না। কিন্তু সেই মুখগুলো চোখের সামনে ভাসছে, আমার সহকর্মীদের পোড়া মুখ ভাসছে।
কত মা আজ তাঁদের সন্তান হারালেন— কেন হলো, কিভাবে হলো— আমরা জানি না।”
এই বর্ণনা শুধু একজন শিক্ষকের ভেতরকার আতঙ্ক ও অসহায়তা নয়, বরং গোটা জাতির সামনে এক ভয়াবহ বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বহু মানুষ তাঁর এই সাহসিকতা ও হৃদয়ের ব্যথা জানিয়ে সহানুভূতি প্রকাশ করছেন।