আর্থিক অনিয়মে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকায় বড় তদন্ত শুরু দুদকের

গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে ব্যক্তি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও শিল্পগোষ্ঠীর মাধ্যমে ব্যাংকিং খাত ধ্বংসের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তদন্তের আওতায় এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক তিন গভর্নর ও চার ডেপুটি গভর্নরসহ একাধিক সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা।
সম্প্রতি দুদকের উপপরিচালক মোমিনুল ইসলামের সই করা একটি চিঠিতে ব্যাংকিং খাতের নানা অনিয়মসংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে। দুদক সূত্র জানায়, তদন্তে বড় ধরনের আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাবেক কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তদন্তে যাদের নাম উঠে এসেছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, ফজলে কবির ও আব্দুর রউফ তালুকদার এবং ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী, এস এম মনিরুজ্জামান, আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান ও আবু ফারাহ মোহাম্মদ নাসের। এছাড়া ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাস ও কাজী সাইদুর রহমানের নামও রয়েছে তালিকায়।
দুদক চিঠিতে উল্লেখ করেছে, নতুন ব্যাংকের অনুমোদন, ঋণ পুনঃতফসিল নীতিমালা, অর্থপাচার, রিজার্ভ ব্যবহারে ডলার ছাড়, এবং অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদনসহ সব নথি জমা দিতে হবে। ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে অনুমোদন পাওয়া ৯টি ব্যাংক— যেমন: মেঘনা, মিডল্যান্ড, মধুমতি, এনআরবি, পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফার্মার্স ব্যাংক) ইত্যাদি—এর অনুমোদন সংক্রান্ত কাগজপত্রও চাওয়া হয়েছে।
এছাড়া ২০১৫ সালের ঋণ পুনঃতফসিল নীতিমালা, ২০০৯ সালের পর থেকে ব্যাংক পরিদর্শন সংক্রান্ত নীতিমালা, ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তনের কাগজপত্রও দুদক জানতে চেয়েছে।
অনিয়মের অভিযোগে আলোচিত বেশ কয়েকটি গ্রুপের তথ্যও চাওয়া হয়েছে, যেগুলো ঋণ সুবিধা পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—বেক্সিমকো, এমআর গ্রুপ, রতনপুর, কেয়া, যমুনা, থার্মেক্স, সিকদার গ্রুপ, বিবিএস, আবদুল মোনেম লিমিটেড, অ্যানোনটেক্সসহ আরও কয়েকটি কোম্পানি। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকানা, ঠিকানা, ঋণের পরিমাণ ও বর্তমান অবস্থান সংক্রান্ত সব তথ্য চেয়েছে দুদক।
দুদকের মহাপরিচালক (প্রিভেনশন) ও মুখপাত্র মো. আখতার হোসেন বলেন, “আর্থিক অনিয়ম নিয়ে একাধিক দল কাজ করছে। তদন্ত শেষ হলে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে এবং যথাসময়ে তা প্রকাশ করা হবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “সম্প্রতি দুদক থেকে বিভিন্ন তথ্য চেয়ে চিঠি এসেছে। আমরা যথাসাধ্য তথ্য সরবরাহের চেষ্টা করছি।”