আমার নিরপরাধ ছেলেডারে ডাইক্যা নিয়া ওসি স্যার জেলে ঢুকাইয়া দিল

থানায় দরবারের কথা কইয়া ওসি স্যার আমার নিরপরাধ ছেলেডারে ডাইক্যা নিয়া জেলে ডুকাইয়া দিল। এইসময় ওসি স্যারের আতে পায়ে দইরাও কোন লাভ হইলো না। টেহা আর ক্ষমতার কাছে বিক্রি হইয়া এই কাজ করছে ওসি স্যার। আমার মাস্টার্স পাস ছেলেডা জেল থাইক্যা বাইর হইয়া তো খারাপই হইবো। বাপ মরা ছেলেডারে কষ্ট কইরা পড়াশোনা করাইছি। নিজের টেহায় জমি কিন্না এমন হইবো কোন দিন ভাবতেও পারি নাই। চোখের পানি ফেলে কথাগুলো বলছিলেন ময়মনসিংহ নগরীর বলাশপুর এলাকার বাসিন্দা
ষাটোর্ধ আনারা বেগম। জমি নিয়ে কয়েক বছর ধরে আনারা বেগমের সাথে বিরোধ চলছে প্রকৌশলী মনিরুজ্জামানের। আনারা বেগম বলাশপুর এলাকার মৃত নুরুল ইসলাম স্ত্রী আর মনিরুজ্জামান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের উপপ্রধান প্রকৌশলী।
জানাযায়, ২০২১ সালে ময়মনসিংহ নগরীর বলাশপুর এলাকায় দালালের মাধ্যমে স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন আনারা বেগম। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি ক্রয় করার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক বাউন্ডারীদেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্র উপ-প্রধান প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান। এনিয়ে ৫ আগস্টের পর থেকে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করলে সম্প্রতি আনারা বেগম এবং তার সন্তানসহ কয়েকজনের নামে থানায় চাঁদাবাজীর অভিযোগ দেন মনিরুজ্জামান।
রাজনৈতিক নেতা এবং প্রশাসনের উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের দিয়ে আনারা বেগম এবং তার ছেলে আল আমিনকে (২৮) জমিতে না যেতে চাপ প্রয়োগ করেন।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বিষয়টি সমাধানের জন্য গত শনিবার (২৬ জুলাই) রাতে থানায় দুই পক্ষকে ডাকেন। রাত আটটা থেকে ১২টা পর্যন্ত সালিশ হলেও সমাধান না আসায় এক পর্যায়ে আল আমিনকে আটক করা হয়। জমিতে না যেতে স্ট্যাম্পে লিখিত দিতে চাপ প্রয়োগ করেন ওসি। তাতে রাজি না হওয়ায় রাজনৈতিক একটি মামলায় গতকাল রোববার বিকেলে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
ভুক্তভোগী আনারা বেগম বলেন, জমির সকল কাগজপত্র দরবারের লোকজন দেইখ্যা যহন বলে আমাদেরটা ঠিক তহনি আলা মিনডারে ডাইক্যা ওসি স্যারের রুমে নেয়। আমিও পিছন পিছন ছুইট্যা যাই। তহন ওসি স্যার ছেরাডারে কইতাছে বাইরিয়া আড্ডি ঘুড্ডি ভাঙ্গাইলাইব। আমি প্রতিবাদ করলে ওসি স্যার কয় এই বেডি খেলা ক্যামনে এইনে ঢুকল। পরে অন্য পুলিশ আমারে রুম থাইক্কা বাইর কইরা দেয়।
এরপর ছেলেডারে যহন লকাপে ঢুকায় তহন ওসি স্যারের হাতে পায়ে ধইরা অনুরোধ করি নিরহ ছেলেডারে জেলে ভরলে খারাপ ওইয়া যাইবো। কিন্তু কোন কথা শুনেনি।
তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে ক্রোকারিজের ব্যবসা করে রাজনীতির সাথে কোনদিন জড়িত ছিল না। এহন শুনি রাজনীতির মামলা দিছে। এত অন্যায় কেন করতাছে।
ক্রয়সূত্রে জমির প্রকৃত মালিকানা দাবি করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্র বিভাগের উপপ্রধান প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আমার বাউন্ডারি করা জমিতে যখন আলামিনরা অবৈধভাবে প্রবেশ করতে চায় প্রথমে আমি বাধা সৃষ্টি করি। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় রাজনৈতিক নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন দিয়ে কথা বলিয়ে ডিআইজি এবং এসপি স্যারের সাথে দেখা করি। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছে জমিতে অন্য কাউকে যেতে দিবেনা। এখন যা করে তারাই করবে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো.মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক মামলায় আলামিনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রোববার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। তার কোন পদপদবী আছে কি না আমি এখনো নিশ্চিত না।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, আলামিনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল। পুলিশ তাকে খোঁজে বাড়িতেও গেছিল পায়নি। কিন্তু তাকে আটকের পর রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
আলামিনের রাজনৈতিক কোন পদপদবী আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি তাঁর মুঠোফোন থেকে দুটি ছবি দেখিয়ে বলেন, যুবলীগের নেতাদের সাথে আলামিনের ছবি রয়েছে।
থানায় সালিশের কথা বলে কেন আলামিনকে গ্রেপ্তার করা হলো এমন প্রশ্নে ওসি আরও বলেন, পুলিশ তাকে আগে থেকেই খোঁজতে ছিল, তাই থানায় আসলে গ্রেপ্তার করা হয়।
সমাজ রুপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘের সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ৫ আগস্টের পর মানুষ পুলিশের পরিবর্তন চেয়েছিল। আসলে পুলিশের কোন পরিবর্তন হয়নি। আমরা একটা বিষয় লক্ষ্য করছি এখন যাকে তাকে দোসর ট্যাগ দিয়ে পুলিশ মামলা বাণিজ্য করছে। আলামিনের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে যা মোটেও কাম্য নয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিষয়টি আমি আপনার কাছ থেকে শুনেছি। দেখছি আসলে প্রকৃত ঘটনাটি কি।