কচুয়া বিএনপির সম্মেলন ঘিরে উত্তেজনা, জেলার শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ

বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উপজেলা জুড়ে একটি নির্বাচনী হাওয়া বইছে। উৎসবের আমেজ বইছে কাউন্সিলর ও সাধারণ নেতাকর্মীদের মাঝে। তবে এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে জেলা বিএনপির সদস্য সচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তার ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে দলের মধ্যে বিবেধ সৃষ্টি হচ্ছে। যা সুষ্ঠু নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে। এসংক্রান্ত পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্ন ধরণের বক্তব্য ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
কচুয়া উপজেলা বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের দাবি, দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারাও কচুয়ার এবং যারা ভোট দিবেন তারা ও কচুয়ার। বিজয়ী এবং প্রতিদ্বন্দী উভয় প্রার্থী কচুয়ায় বসবাস করবেন। কচুয়ায় রাজনীতি করবেন। কিন্তু তফসীল ঘোষনার পর থেকে জেলা বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা কচুয়ার ভোটারদের ডেকে ডেকে বাড়িতে নিয়ে হুমকি দিচ্ছেন। তিনি বলেছেন, কয়েকদিন পরে আমি সভাপতি হব, এখন আমার কথা না শুনলে তখন কিভাবে রাজনীতি কর দেখে নিব। তার কথা স্পষ্ট সভাপতি প্রার্থী হাজরা আছাদুল ইসলাম পান্নাকে ভোট দিতে হবে। এভাবে ভয়ভীতি দেখালে কিভাবে গনতন্ত্রের চর্চা হয়।
কচুয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থী সাবেক যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আজকেও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোজাফফর রহমান আলম, পৌর বিএনপি নেতা শেখ শাহেদ আলী রবি, বিএনপি নেতা সৈয়দ নাসির আহমেদ মালেক, শ্রমিক দল নেতা সরদার লিয়াকত আলী, কৃষকদলের আসাফুদৌলা জুয়েল, স্বেচ্ছাসেবক দলের জাহিদুল ইসলাম শান্তসহ কয়েকজন কচুয়ায় এসেছেন। তারা বিএনপির অফিসেও আসেননি। তারা তাদের পছন্দের প্রার্থী হাজরা আছাদুল ইসলাম পান্না ও তার প্যানেলের লোকজনকে ভোট দেওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের চাপ দিচ্ছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার জন্য জেলা বিএনপির নেতাদের এ ধরণের প্রভাব বিস্তার বন্ধ করার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এই নেতা।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, বিগত ১৬ বছর সরদার জাহিদ ও সদস্য সচিব তৌহিদুল ইসলামসহ হাতেগোনা কয়েকজন মানুষ কচুয়া উপজেলা বিএনপিকে টিকিয়ে রেখেছে। কিন্তু এখন নেতার অভাব নেই। জেলা বিএনপির লোকজন আসছে, কাকে ভোট দিব তা নির্ধারণ করে দিতে। যখন নেতাকর্মীরা জেল খেটেছে, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের পিটুনি খেয়েছে, তখন এসব নেতারা শান্তনা জানাতেও আসেনি আমাদের। এসব নেতাদের কথায় ভোট হবে না, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন যেসব নেতা বিগত দিনে কর্মীদের পাশে ছিল, আমরা তাদেরকেই ভোট দিব।
এদিকে জেলার নেতৃবৃন্দের এসব অসাংগঠনিক কর্মকান্ড বন্ধের দাবিতে বুধবার দুপুরে উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলোচনা সভায় উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভায় উপস্থিত জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমান আহবায়ক কমিটির সদস্য খান মনিরুল ইসলাম বলেন, ২৬ জুলাইয়ের সমম্মেলনকে কেন্দ্র করে বাগেরহাট থেকে আমাদের কিছু নেতৃবৃন্দ এই কচুয়ায় উত্তেজনা ছড়াচ্ছে । আজকে বাগেরহাট থেকে আরও কয়েকজন নেতা বিশাল বহর নিয়ে কচুয়া এসেছেন। তারা তো কচুয়ার ভোটার না অথচ তারা এখানে এসে ভোট চাচ্ছে ।দলের ভিতর বিভেদ সৃষ্টি করছে । বাগেরহাট থেকে যারা এসেছে তারা তো কেউ কচুয়ার ভোটারই না । তারা এখানে ভোট চাচ্ছে নাকি ভয় দেখানোর চাচ্ছে আমরা বুঝতে পারছি না । এখানে অনেকে অভিযোগ করেছে আমাদের সাবেক এক নেতার বাসায় ডেকে নিয়ে হুমকি ধামকি প্রদর্শন করা হচ্ছে । তারা বলছে যে কিছুদিনের ভিতর তিনি বাগেরহাট জেলার সভাপতি নির্বাচিত হবেন এবং তার পছন্দের প্রার্থীকে যদি ভোট না দেওয়া হয় তাহলে তারা বিএনপি করতে পারবে না । আমি বিশ্বাস করি এ ঘটনা সত্যি না, যদি সত্যি হয় এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ, কারণ আমার নেতা তারেক রহমান সারা বাংলাদেশকে বলেছেন ভোটাররা যাকে ভোট দিবে তারাই নেতা হবে । আমি বিএনপি'র কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং বাগেরহাটসহ এই দক্ষিণ অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় নেতা আমানুল্লাহ আমান, অনিন্দ ইসলাম অমিত, জয়ন্ত কুন্ডুসহ যেসব টিম বিভিন্ন জেলায় কাজ করছে আমি তাদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অনতিবিলম্বে এই বহিরাগতদের হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হোক।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপি নেতা সৈয়দ নাসির আহমেদ মালেক বলেন, আমরা কচুয়ায় এসেছি ভোটের পরিবেশ দেখতে আসছি। কিন্তু আমাদের কিছু নেতা এসব বিষয় নিয়ে প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছেন। একজন নেতা আমাদেরকে বহিরাগত বলেছে, এটায় আমাদের কষ্ট লেগেছে।তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। আমরাও কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ চাই।
জেলা বিএনপি কর্তৃক গঠিত মনিটরিং টিমের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২৬ জুলাই কচুয়া উপজেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনে সভাপতি পদে সরদার জাহিদ ও হাজরা আছাদুল ইসলাম পান্না, সাধারণ সম্পাদক পদে শেখ তৌহিদুল ইসলাম ও সরদার শাহনেওয়াজ, এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে হুমায়ুন কবির, শেখ জাহাঙ্গীর হোসেন, মোঃ নুরুল ইসলাম শিকদার, মোঃ মহিদুল ইসলাম নকিব ও মুহাম্মাদ আব্দুন সালেক শেখ প্রতিদ্বন্দীতা করছেন। ৭টি ইউনিয়নের ৪৯৭ জন ভোটার এই নির্বাচনে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।