বাগেরহাটে সংসদীয় আসন কমানোর প্রস্তাবে উত্তাল জনমত, প্রতিবাদের ঝড় সর্বত্র

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাট জেলার চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে একটি কমিয়ে তিনটি করার প্রস্তাবে ক্ষোভে ফুঁসছে জেলার সর্বস্তরের মানুষ। নির্বাচন কমিশনের কারিগরি কমিটির খসড়া প্রস্তাবে বাগেরহাটের আসনসংখ্যা কমানো হবে এমন খবর প্রকাশের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও জনপরিসরে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ। নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক প্রস্তাব বুধবার (৩০ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানান, সংবিধানের ১১৯-১২৪ ধারা অনুযায়ী জাতীয় সংসদের আসন সীমানা পুনর্নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেসব জেলায় ভোটার সংখ্যা কম, সেসব স্থানে আসন কমিয়ে দেওয়া এবং বেশি ভোটারসংখ্যার জেলায় আসন বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে। এই ধারাবাহিকতায় বাগেরহাট-২ ও বাগেরহাট-৩ আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের পরিকল্পনার কথা জানানো হয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচ্য খসড়া অনুযায়ী, বাগেরহাট-১ (চিতলমারী, ফকিরহাট, মোল্লাহাট), বাগেরহাট-২ (বাগেরহাট সদর, কচুয়া ও রামপাল), এবং বাগেরহাট-৩ (মোংলা, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা) – এই তিনটি আসন হতে পারে নতুন বিন্যাসে।
জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক বাস্তবতা ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাগেরহাট জেলার আয়তন ৩,৯৫৯.১১ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ ১৩ হাজার। বিশ্লেষকদের মতে, জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় বাগেরহাট এখনো চারটি সংসদীয় আসন রাখার যোগ্য। ১৯৮৪ সালে জেলাটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে চারটি আসনই বিদ্যমান।
জনমত ও প্রতিক্রিয়া বাগেরহাটের সাধারণ জনগণ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সুশীল সমাজ এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন।
ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, বাগেরহাট এমনিতেই অবহেলিত শহর। এরপর যদি একটি আসন কমে যায়, তাহলে উন্নয়নের ধারা আরও ব্যাহত হবে। নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত ভুল।
পিসি কলেজের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান জায়েদ বলেন, চারটি আসন থাকা অবস্থাতেও উন্নয়ন হয়নি, আর একটি আসন কমে গেলে দুর্ভোগ আরও বাড়বে।
ছাত্রনেতা শেখ আল মামুন বলেন, চারটি আসনও আমাদের কাছে কম মনে হয়। তিনটি করা হলে রাজনৈতিক কোন্দল বাড়বে এবং জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা সংসদে প্রতিফলিত হবে না। আমরা এই সিদ্ধান্ত মানি না।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ,বিএনপি নেতা খান মনিরুল ইসলাম বলেন,ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব বিবেচনায় বাগেরহাট একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। সুন্দরবন, ষাটগম্বুজ মসজিদ, মোংলা বন্দরের মতো স্থাপনা এখানে রয়েছে। আসন কমানোর সিদ্ধান্ত জেলা অবহেলিত করবে।
বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহবায়ক এটিএম আকরাম হোসেন তালিম বলেন, ১৯৮৪ সাল থেকে বাগেরহাটে চারটি আসন ছিল, হঠাৎ করে তা তিনটি করা একটি অবমাননাকর সিদ্ধান্ত। আমরা এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাই এবং দাবি জানাই তা অবিলম্বে বাতিল করা হোক।
জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা রেজাউল করিম বলেন, সুন্দরবনের মতো বিশ্ব ঐতিহ্যের জেলা বাগেরহাটে আসন কমানোর মাধ্যমে ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা এর প্রতিবাদ করছি ও কঠোর কর্মসূচির হুমকি দিচ্ছি।
পূর্বের আসন বিন্যাস ,বর্তমান সংসদীয় সীমানা অনুযায়ী ,বাগেরহাট-১: চিতলমারী, ফকিরহাট, মোল্লাহাট ,বাগেরহাট-২: বাগেরহাট সদর ও কচুয়া ,বাগেরহাট-৩: মোংলা ও রামপাল ,বাগেরহাট-৪: মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা।
বাগেরহাটের আসন কমানোর প্রস্তাব নিয়ে জনমনে স্পষ্ট বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দল ও শিক্ষার্থী সকলেই এই প্রস্তাব প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন, আসন কমানো হলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে এবং জনগণের স্বার্থ উপেক্ষিত হবে। জনমতের এই প্রবল স্রোত কীভাবে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে, তা এখন দেখার বিষয়।