লবণাক্ত জমিতে আশার আলো দেখাচ্ছে ব্রি হাইব্রিড ধান-৮

সাতক্ষীরার উপকূলীয় উপজেলা দেবহাটার কৃষিতে দীর্ঘদিন ধরেই লবণাক্ততা প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে ঘেরে পানি সংকট দেখা দিলে জমিতে সেচ দেওয়া লবণাক্ত পানি ও জমির লবণের আধিক্যে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ফলন ব্যাহত হয়। এতে কৃষকেরা চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
তবে সাম্প্রতিক এক পরীক্ষামূলক উদ্যোগ এই চিত্র বদলানোর সম্ভাবনা তৈরি করেছে। সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া ও উত্তরণ কর্তৃক বাস্তবায়িত ‘সফল ফর আইডব্লিউআরএম’ প্রকল্পের আওতায় দেবহাটার ৩টি ইউনিয়নের ৬ জন কৃষকের জমিতে ব্রি হাইব্রিড ধান-৮ চাষ করে মিলেছে উল্লেখযোগ্য ফলন।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআরআরআই) উদ্ভাবিত এই জাতটি লবণ সহনশীল, রোগবালাই কম এবং আগাম পরিপক্ব হয়। গাছ শক্ত, শীষ মোটা ও লম্বা হওয়ায় ফলনও বেশি।
চাষি আরতি সরদার জানান, নিজের বাগদা ঘেরের মাঝে তিনি তিন জাতের ধান রোপণ করেছিলেন— ব্রি হাইব্রিড-৮, এসএল-৮ ও এসিআই। এতে সবচেয়ে ভালো ফলন দিয়েছে ব্রি হাইব্রিড-৮, বিঘা প্রতি পেয়েছেন ২৮.৩ মণ। অপরদিকে এসএল-৮ দিয়েছে ২২.৮ মণ এবং এসিআই ধান থেকে পেয়েছেন ২৬.৬ মণ। তিনি জানান, “গাছ শক্ত, আগাম পাকে, রোগবালাইও কম — সব মিলিয়ে খুব ভালো ফলন হয়েছে।”
আজিজপুর গ্রামের চাষি আবদুল মজিদ জানান, ৪৯ শতক জমিতে ব্রি হাইব্রিড-৮ চাষ করে তিনি বিঘা প্রতি পেয়েছেন ৩০ মণ ধান, যেখানে গত বছর একই জমিতে আফতাব-৭০ চাষ করে পেয়েছিলেন মাত্র ১৭.৫ মণ। তিনি বলেন, “এই জাতের ধানে চিটা নেই, রোগবালাই প্রায় ছিল না, এমনকি ঘেরের লবণাক্ত পানিতেও খুব ভালো ফলন হয়েছে।”
সচেতন মহলের মতে, ব্রি হাইব্রিড ধান-৮ এর চাষ দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের ঘেরভিত্তিক কৃষিতে এক নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। রোগবালাই কম হওয়ায় উৎপাদন খরচ কম, ফলে কৃষকের লাভ বেশি। স্থানীয় চাষিরা জানিয়েছেন, আগামী মৌসুমে এ জাতের ধান আরও বেশি জমিতে চাষ করবেন তারা।
দেবহাটা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. শওকত ওসমান বলেন, “ব্রি-হাইব্রিড-৮ ধানটি আমাদের এলাকার জন্য খুবই উপযোগী। লবণসহিষ্ণু হওয়ায় এটি কৃষকদের জন্য লাভজনক। আমরা এই জাত চাষে কৃষকদের আরও উৎসাহ দিচ্ছি।”