রাজস্ব ঘাটতি ও ঋণনির্ভরতা অর্থনীতির স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে ফেলেছে: বাংলাদেশ ব্যাংক

রাজস্ব আহরণ কম হওয়ায় সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন সংকুচিত হয়েছে। এতে ব্যাংক খাতে তারল্যের চাপ বেড়ে গেছে। ঘাটতি পূরণে সরকার ঋণনির্ভর হওয়ায় মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বাড়ছে। দুর্বল রাজস্ব ব্যবস্থা, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি এবং বড় বাজেট ঘাটতির কারণে অর্থনীতিতে স্থবিরতা বিরাজ করছে, যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব শঙ্কা ও আশাবাদের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটি প্রকাশে এক বছরের বিলম্ব হয়েছে, যা সরকারের পরিবর্তন ও তথ্যসংগ্রহের ঘাটতির কারণেই ঘটেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের আগস্টে সরকারের পরিবর্তনের পর সরকারি ব্যয় নীতিতে শৃঙ্খলা এসেছে এবং অপচয় কমেছে। অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং সঞ্চয় বাড়তে শুরু করেছে। এর ফলে ব্যাংক খাতে তৈরি তারল্য সংকট কিছুটা কমেছে। এতে ভবিষ্যতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যা কর্মসংস্থান ও উৎপাদন বৃদ্ধি করে মানুষের আয়ের উন্নতি ঘটাবে এবং মূল্যস্ফীতির চাপ কমাবে।
গত কয়েক বছর ধরে দেশের মূল্যস্ফীতি অনেকটা বেশি ছিল, যা ভোক্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল। সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করেছে এবং আগামীতে এটি আরও কমার আশা করা হচ্ছে।
সরকার পরিবহন, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে, যা কর্মসংস্থান ও ব্যবসায়িক পরিবেশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। পদ্মা ও যমুনা সেতুতে রেল সেতুর উদ্বোধনের ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এসব অঞ্চলে বিনিয়োগ ও অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে এবং বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করতে হবে।
রাজস্ব আহরণ কম থাকার কারণ সরকারের কর কাঠামোয় ছাড় দেওয়া এবং ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের ধীরগতির ফল। এর কারণে উন্নয়ন কাজে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন কমেছে। সরকার ঋণ নিয়ে ঘাটতি পূরণ করায় ঋণের ব্যয় বেড়েছে এবং বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমেছে, যা মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বাড়িয়েছে।
মোটের ওপর, দুর্বল রাজস্ব ব্যবস্থা, মূল্যস্ফীতির চাপ বৃদ্ধি এবং বড় বাজেট ঘাটতির কারণে অর্থনীতিতে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি কমে গেছে।