গোপালগঞ্জে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন

সড়ক পরিবহণ ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, গোপালগঞ্জের সহিংসার ঘটনায় দুই-এক দিনের মধ্যে একজন বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করবে সরকার। এটা হবে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন। যেখানে শুধুমাত্র সরকারি কর্মকর্তাই থাকবেন না, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও থাকবেন।
মঙ্গলবার দুপুর ২টায় জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ও পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
উপদেষ্টা বলেন, গোপালগঞ্জে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে এটা যেন আর না ঘটে, প্রধান উপদেষ্টা প্রশাসনকে সম্পূর্ণভাবে নির্দেশ দেবেন। আমরা এসেছি প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করার জন্য। এ ঘটনার গভীরে সরকার যাবে। এটা থেকে আমাদের ভবিষ্যতের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কমিশন ঘটনার তদন্ত করবেন, আমরা কিন্তু তদন্ত করতে আসিনি। আশা করি আপনারা তদন্ত কমিশনকে তথ্য উপাত্ত দিয়ে সার্বিক সহায়তা করবেন। আমরা কমিশনের রিপোর্টে জানতে পারবো, সেদিন কি হয়েছিল? কেন হয়েছিল, কি করলে এটা এড়ানো যেত?
১৬ জুলাই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচি সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, কর্মকর্তা কর্মচারীরা ধারণা করেছিলেন, কিছু একটা ঘটবে, কিন্তু এর ব্যাপকতা কেউ অনুমান করতে পারেনি। সীমিত সম্পদ দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সেনাবাহিনী সবাই মিলে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছেন। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সাংবাদিকরা আহত হয়েছেন। নানারকম ঝুঁকি সত্ত্বেও তারা দায়িত্ব পালন করেছেন- আমরা তাদের অভিনন্দন জানাতে এসেছি।
ফাওজুল কবির খান বলেন, এটা একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, দল নিরপেক্ষ সরকার, এটা শহীদদের রক্তের উপর প্রতিষ্ঠিত সরকার। বিশ-ত্রিশ হাজার আহতদের আত্মত্যাগের সরকার। সুতরাং এখানে গোপালগঞ্জ জেলাও যা, আমাদের নিজেদের জেলাও তাই। প্রধান উপদেষ্টা সেই বার্তাটাই দিয়েছেন।
তিনি বলেন, যারা পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা করেছেন তারা আইন অনুযায়ী অবশ্যই শাস্তি পাবেন। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাভাবিক জীবন যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য আমরা সবকিছু চেষ্টা করব। অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার চেষ্টা করছে একটা গণতন্ত্রের চর্চা করতে। আগে তো গণতন্ত্রের চর্চা হয়নি। বিরোধী মত হলেই দমন করা হয়েছে। আয়না ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নানা রকম শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এখন আমরা চাচ্ছি সেই পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে।
উপদেষ্টা বলেন, এমন কোনো মতামত দিবেন না যাতে নিজেদের জন্যই নিজেদের দল বা মতাদর্শের জন্য ক্ষতিকর। এভাবেই একটি সহনশীলতার পরিবেশ গড়ে উঠবে।
এ সময় পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারি লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ, ঢাকা রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক, জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান, পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত কারাগার, জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের ফলক, এনসিপির সভাস্থল, জেলা প্রশাসকের বাসভবনসহ এলাকা পরিদর্শন করেন দুই উপদেষ্টা।