লৌহজংয়ে ফসলি জমি কেটে চলছে ড্রেজার বাণিজ্য

মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার খিদিরপাড়া মৌজা ও বৌলতলী ইউনিয়নে বছরের পর বছর ধরে ফসলি জমির উর্বর মাটি কেটে চলছে বেপরোয়া বাণিজ্য।প্রতি মৌসুমেই বিপুল পরিমাণ আলু ও ধান উৎপাদন করে আসছিলেন কৃষকেরা। কিন্তু কয়েক বছর ধরে নুরে আলম সারেং নামে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি এই জমিগুলো থেকে কখনো ভেকু, কখনো ড্রাম ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে মাটি তুলে বিক্রি করে আসছেন। অনুসন্ধানী গিয়ে দেখা গেছে, খিদিরপাড়ার একটি বিলে চারদিকে ধইঞ্চা দিয়ে ঘেরা অবস্থায় বর্ষা মৌসুমে ড্রাম ড্রেজার বসানো রয়েছে । শুকনো মৌসুমে আলু চাষ শেষে ওইসব জমি থেকে মাটি কেটে অন্যত্রে বিক্রি করা হয় হয়।
খিরপাড়া ও বলতলী ইউনিয়নের এ বিলের বিভিন্ন স্থানে সব মিলিয়ে প্রায় ১০ একর ফসলি জমির উর্বর মাটি ইতিমধ্যে কেটে অন্যত্র অবৈধভাবে ড্রেজারের মাধ্যমে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ, পাইপের মাধ্যমে এসব মাটি সিরাজদিখান ও শ্রীনগরের বিভিন্ন স্থানে ভরাট কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।এছাড়া মাইজগাঁও বাজারসংলগ্ন মূল সড়ক ও কালভার্টের পাশের সরকারি খাল এবং বড় একটি জমি ভরাটের কাজও এখন চলছে।
এলাকা বাসির দাবি নুরে আলম সারেংয়ে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী যে, বিগত সরকারের আমলে কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পাননি।
স্থানীয় সাংবাদিকদের একাধিক প্রতিবেদন ও টিভি নিউজের পর প্রশাসন কয়েকবার জরিমানা ও ভাঙচুর করলেও তিনি থেমে থাকেননি। বরং এখনো বছরের ১২ মাস একই গতিতে চালিয়ে যাচ্ছেন অবৈধ এই বাণিজ্য।
এদিকে স্থানীয়দের সাথে কথা বললে আরো রহস্য বেরিয়ে আসে এই ব্যবসার , কৃষক বা জমির মালিকদের কাছ থেকে জমি কিনে তা ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখে লোন আদায় করেন।
পরে সেই জমির মাটি কেটে আলাদা করে বিক্রি করে দুই দিক থেকেই বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন।
অন্যদিকে, লৌহজং উপজেলা প্রশাসন সম্প্রতি অনেকাংশে অবৈধ ড্রেজার, পাইপ স্থাপন এবং মাটি কাটা কার্যক্রম বন্ধে সফল হয়েছে। কিন্তু এই নুরে আলম সারেং এক চালাক প্রকৃতির লোক এমন সব জায়গায় ড্রেজার বসায় ওখানে সাধারণ মানুষ ও প্রশাসনের যাওয়াটা খুব কষ্টসাধ্য। এলাকাবাসি বলছে নুরে আলম সারেংয়ের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রশাসনের ওই পরিপূর্ণ সফলতা একটু প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যাচ্ছে।
এলাকাবাসীর মতে, নুরে আলম সারেং প্রতিবছরই নতুন করে তিন থেকে চারটি আলুর জমি কিনে এই অবৈধ ব্যবসা আরও বিস্তৃত করার চেষ্টা করছেন। তার বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ উঠলেও কার্যকর দমন না হওয়ায় সাধারণ মানুষ হতাশ। এখন সময় এসেছে এই নুরে আলম সারেংকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার। লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নেছার উদ্দিন জানান, প্রশাসনের নজরদারি অব্যাহত রয়েছে এবং এই ধরনের অবৈধ কার্যক্রম রোধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
খুব শিগ্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। স্থানীয় কৃষকেরা এবং সচেতন মহল মনে করছেন, দেরি হলে বিলগুলো আর কোনোদিন ফসলের মাঠে ফিরবে না।