মুক্তিপণ পেয়েও অপহরণকৃত ভাগিনাকে হত্যা; মামা গ্রেপ্তার

কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ভাগিনাকে অপহরণের পর মুক্তিপণ পেয়েও হত্যা করেছে নিজ মামা। ঘটনার ১৪ দিন পর মামাকে গ্রেপ্তারের পর চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থেকে পুলিশ অপহৃত ভাগিনার গলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের মিডিয়া ফোকাল পয়েন্ট ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার( ট্রাফিক) মো. জসিম উদ্দীন চৌধুরী বৃহস্পতিবার বিকালে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অপহরণের পর হত্যা শিকার মোহাম্মদ আকরাম (১৩) উখিয়ার ১০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মোহাম্মদ ইদ্রিসের ছেলে।
গ্রেপ্তার মামা কামাল হোসেন (২৫) একই ক্যাম্পের মৃত আবুল কাসেমের ছেলে এবং আকরামের মা সারা খাতুনের আপন ভাই।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার( ট্রাফিক) মো. জসিম উদ্দীন চৌধুরী জানিয়েছেন, গত ৩ এপ্রিল মোহাম্মদ আকরাম অপহরণের শিকার হন। এর পর পরিবারের নিকট ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। পরবর্তীতে আকরামের পিতা নগদ একাউন্টে ২ লাখ ১৩ হাজার টাকা মুক্তিপণ পাঠায়। এরপরও অপহৃততে ছেড়ে না দেয়ায় গত ১৫ এপ্রিল মঙ্গলবার পিতা মোহাম্মদ ইদ্রিস বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন আসামীর বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় মামলা দায়ের করে।
এএসপি বলেন, মামলা রুজু হওয়ার পরপরই উখিয়া থানার একটি বিশেষ টিম ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া থানা এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বুধবার বিকালে তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে কামাল হোসেন গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে কামাল স্বীকার করে সে সাতকানিয়া বিবিসি নামক ব্রিক ফিল্ডে কাজ করে। গত ৩ এপ্রিল সকালে তার বোনের বাড়ীতে ঈদ উপলক্ষ্যে বেড়াতে যায়। ফেরার সময় কৌশলে ভাগিনাকে অপহরণ করে তার সাথে করে কুতুপালং বাজার হতে সিএনজি নিয়ে কক্সবাজার লিংক রোড এবং লিংক রোড হতে একটি বাসে করে চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া থানার কেরানীরহাট বাজারে নামে। কেরানীরহাট থেকে থামহনী এলাকায় নিয়ে আটক করে রাখে এবং রাতে ওখানে অবস্থান করে। পরবর্তীতে গত ৪ এপ্রিল বোনের নাম্বারে কল করে ভিকটিমকে দিয়ে কথা বলিয়ে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আসায় আসামীর দেওয়া ২টি নগদ একাউন্টে বিভিন্ন সময়ে সর্বমোট- ২ লাখ ১৩ হাজার টাকা পাঠানো হয়। কামাল হোসেন ভাগিনা মুক্তি পেয়ে বাড়িতে ফিরে এসে তার পরিবারের নিকট ঘটনার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করবে তাই আকরামকে ঘটনাস্থলে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
কামাল হোসের দেখিয়ে দেয়া রসুলাবাদ গ্রামের ইকবাল-হাসান কনভেনশন হলের পূর্ব পাশে পূবের বিল পুরাতন খালের উত্তর পারের কিনারে কচুরি পানার নিচ থেকে বুধবার সন্ধ্যায় আকরামের গলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ময়না তদেন্তর জন্য লাশ মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে এবং ঘটনাস্থলে ভিকটিমের ১ জোড়া প্লাস্টিকের সেন্ডেল পাওয়া যায়। আসামীকে যথাযথ নিয়মে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের তথ্য বলছে, এনিয়ে গত ১৫ মাসে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৪৫ জন এবং উখিয়া থেকে ৮৮ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে বেশিভাগ মুক্তিপণ দিয়ে ফিরলেও হত্যা করা হয়েছে ৩ জনকে।