১৫ মৃত্যু দেখা পর বসল গতিরোধক: দুর্ঘটনা কমবে, নাকি নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়বে?

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় টানা তিনটি ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় মাত্র ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে ১৫ জনের প্রাণহানি এবং অন্তত ৩০ জন আহতের ঘটনার পর অবশেষে নড়েচড়ে বসেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চরম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত এই স্থানে দুর্ঘটনা রোধের চেষ্টায় র্যাম্বল স্পিড বসানো হয়েছে। বুধবার (৩ এপ্রিল) সকালেই এই এলাকায় একটি যাত্রীবাহী মাইক্রোবাস ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নারী-শিশুসহ ১০ জন নিহত হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনার পরপরই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা আশা প্রকাশ করে বলেন, এই র্যাম্বল স্পিড স্থাপনের ফলে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রিত হবে এবং দুর্ঘটনার হার হ্রাস পাবে।
এদিকে দোহাজারী হাইওয়ে থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের অবিলম্বে চার লেনে উন্নীত করার উপর পুনরায় গুরুত্ব দেন।
চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লোহাগাড়ার চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরেই একটি দুর্ঘটনাপ্রবণ অঞ্চল। চুনতি অভয়ারণ্যের নিকটবর্তী এই অংশে প্রায় তিন কিলোমিটার জুড়ে সড়কটি পাহাড়ি ঢালু এবং এতে বেশ কয়েকটি বিপদজনক বাঁক রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা, গাড়ি চালক, পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা একমত যে, এই এলাকার উঁচু-নিচু এবং অপ্রশস্ত বাঁকগুলো অত্যন্ত বিপদজনক। চালকদের বেপরোয়া গতি, লবণ বা কাদা মিশ্রিত পানিতে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে যাওয়া, সড়কের প্রকৌশলগত ত্রুটি এবং বিশেষ করে ছুটির সময় বহিরাগত চালকদের এই সড়কের সাথে অপরিচিতি -এই সব বিষয়ই সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাগুলোর কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
আরাকান সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. মুসা এবং লোহাগাড়া সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিন খানসহ অনেকেই দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য সড়ক প্রশস্তকরণ (৪ বা ৬ লেন), বাঁক অপসারণ এবং ডিভাইডার নির্মাণের জোর দাবি জানিয়েছেন।
লোহাগাড়ার ইউএনও মো. ইনামুল হাছান জানিয়েছেন, উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীকের পরিদর্শনের পর বাঁক অপসারণের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
তবে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের এই র্যাম্বল স্পিড স্থাপনের উদ্যোগ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও চালকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। দুর্ঘটনা কমানোর এই চেষ্টাকে অনেকে স্বাগত জানালেও, নিরাপত্তা নিয়ে নতুন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে মহাসড়কের এই অংশটি অত্যন্ত নির্জন হওয়ায় ভিন্ন আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আরো বেশী দুর্ঘটনা হবে বলে মনে হচ্ছে! আর চুরি-ডাকাতি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। এলাকা জনশূন্য!”
অনেকেই আশঙ্কা করছেন, নির্জন এই এলাকায় র্যাম্বল স্পিডের কারণে গাড়ির গতি কমাতে বাধ্য হলে, সেই সুযোগে দুষ্কৃতিকারীরা চলন্ত গাড়িতে ডাকাতির চেষ্টা করতে পারে।
আপাতত, নতুন স্থাপিত র্যাম্বল স্পিডগুলো দুর্ঘটনা কমাতে কতটা সহায়ক হবে এবং তা নতুন কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করবে কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য সড়ক অবকাঠামোর উন্নয়নের দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।