ঈদের ছুটিতে পর্যটনস্পটগুলোতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়

পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের পর্যটনস্পটগুলোতে দর্শনার্থীদের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। সব বয়সী মানুষ ছুটছে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে। ঈদ উপলক্ষে পর্যটনস্পটগুলোতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে মোতায়েন করা হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যও। এবার ঈদে লম্বা ছুটি পেয়ে ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন অনেকে। ঈদের দিন দুপুর থেকে উপজেলার ডজনখানেক পর্যটন স্পটে পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত ছিল।
জানা গেছে, ঈদের ৯ দিনের একটানা লম্বা ছুটিতে উপজেলার ১২টি পর্যটনস্পট ভ্রমণপিপাসুদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। কক্সবাজার বা সিলেটের মতো না হলেও মিরসরাইয়ের সবুজ পরিবেশ, নির্মল হ্রদ, মনোরম ঝরনা, সমুদ সৈকত প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে টানছে। দর্শনার্থীরা দিন দিন এই উপজেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন।
মিরসরাইয়ে ১২টি পর্যটন স্পটের মধ্যে রয়েছে- দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়া সেচ প্রকল্প ও হ্রদ, মুহুরী প্রজেক্ট, ডোমখালী সমুদ্র সৈকত, শিল্পজোন সমুদ্র সৈকত, আরশী নগর ফিউচার পার্ক, আট স্তর বিশিষ্ট জলপ্রপাত খৈয়াছড়া ঝরনা, রূপসী ঝরনা, বাওয়াছড়া প্রকল্প, বোয়ালিয়া ঝরনা, জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে উপকূলীয় বন, হিলসডেল মাল্টি ফার্ম অ্যান্ড মধুরিমা রিসোর্ট ও মেলখুম ট্রেইল। এবার ঈদে এখানকার পর্যটনের স্পষ্টগুলো হয়ে উঠেছে লোকে লোকারণ্য।
ঈদের চতুর্থ দিন বৃহস্পতিবার বিকালে মুহুরী প্রজেক্ট স্লুইস গেটে গিয়ে দেখা গেছে, পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত পুরো এলাকা। পর্যটকদের কেউ বাঁধের ওপর ছবি তুলছেন কেউবা ফেনী নদীতে নৌকা ভ্রমণ করছেন। পর্যটকদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ ছিল ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকায় করে নদী ভ্রমণ। এ ছাড়া বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিচে গিয়ে ছবি তুলতে দেখা গেছে অনেককে।
ঈদের দ্বিতীয় দিন আরশি নগর ফিউচার পার্কে গিয়ে দেখা গেছে, পর্যটকদের প্রচণ্ড ভিড়। এ যেন অন্যরকম আরশিনগর। সব বয়সী মানুষ সেখানে বেড়াতে এসেছেন। ছবি তুলছেন, গল্প করছেন। বিশেষ করে বেশী আনন্দ করতে দেখা গেছে শিশুদের। শিশুদের ভিন্ন ভিন্ন রাইডসে চড়তে দেখা গেছে। অনেকে শিশু বিভিন্ন জীবের আকৃতির সঙ্গে ছবি তুলছেন।
ডোমখালী সমুদ্র সৈকতে ছুটে যাচ্ছেন মানুষ। অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা একস্থান ডোমখালী। ঝাউবন, লাল কাঁকড়ার চর, উত্তাল সাগরে নৌকা ভেসে বেড়ানো, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য, হরিণের পদচিহ্ন সবই দেখতে ছুটে যাচ্ছেন সব বয়সী মানুষ।
শুধু দিনে নয়, রাতেও সাগর পাড়ে দেখা মেলে অসংখ্য মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারের। রাতে বিশাল সমুদ্রের গর্জন কান পেতে শুনে সেখানে ছুটে যান তরুণরা।
উপজেলার আরেক কৃত্রিম লেক বাওয়াছড়ায় যাচ্ছেন লোকজন। ঈদের ছুটিতে ঘরে বসে না থেকে সবাই যাচ্ছেন এই স্পটে। বাওয়াছড়া লেক স্থানীয়ভাবে নীলাম্বর লেক নামেও পরিচিত। এখানে দুই পাশের সুউচ্চ পাহাড় থেকে পানির অবিরাম লেকে গড়গড়িয়ে পড়ার দৃশ্য ও শব্দ পর্যটকদের সব ক্লান্তি মুহূর্তেই দূর করে দেবে।
উপজেলার ঝরনাগুলো রাস্তার মুখে দাঁড়ানো গাড়ি দেখে বোঝা যাচ্ছে কী পরিমাণ ভ্রমণপিপাসু লোকজন ঝরনায় ছুটে গেছেন। যদিও বর্ষা মৌসুমের মতো পানি এখন নেই। তারপরও ঝরনায় আনন্দের কমতি নেই। এভাবে মিরসরাই প্রতিটি পর্যটন স্পটে ছুটে যাচ্ছেন মানুষ। কয়েকটি স্পটে শুধুমাত্র ইজারার কারণে টিকিট সংগ্রহ করে যেতে হয়। বেশির ভাগ পর্যটনস্পট উন্মুক্ত।
কুমিল্লা থেকে ঘুরতে আসা মিনহাজ বলেন, মিরসরাইয়ের সব ঝরনা মোটামুটি দেখা হয়ে গেছে। শুধু বোয়ালিয়া ঝরনা ঘুরতে পারিনি। এবার ঈদের ছুটিতে এখানে ঘুরতে এলাম। খুব ভালো লাগছে, আমরা একটি বাস ভাড়া করে এসেছি। আমাদের গ্রুপে প্রায় ২৮ জন রয়েছে।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা প্রশাসক মাহফুজা জেরিন বলেন, ঈদের ছুটি থাকায় এবার পর্যটক বেড়েছে। মিরসরাইয়ের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে সারা বছর পর্যটক কমবেশি থাকেন। ঈদের সময় পর্যটকদের বাড়তি চাপ পরিলক্ষিত হয়। ঝরনায় বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে গাইড নিয়ে পর্যটকদের আসা-যাওয়া করার জন্য ইজারাদারদের বলা হয়েছে। গাইড ছাড়া কেউ যেন ঝরনা যেতে না পারেন, সে বিষয়েও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছে।
