সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ-তামান্নার পরিকল্পনায় জোড়া খুন

চট্টগ্রাম নগরীতে প্রাইভেটকারে ‘ব্রাশফায়ার’ করে দুজনকে খুনের ঘটনার দুদিন পর শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রীসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৬ থেকে ৭ জনকে মামলায় আসামি করা হয়।
মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় নগরীর বাকলিয়া থানায় নিহত বখতিয়ার হোসেন মানিকের মা ফিরোজা বেগম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নগর পুলিশের দক্ষিণ জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. মাহমুদুল হাসান মামুন বলেন, ‘গত ৩০ মার্চ রাতে দুই খুনের ঘটনায় আজ নিহত মানিকের মা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় মোট সাতজনকে আসামি করা হয়েছে।’
মামলায় সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্না ছাড়াও আসামি করা হয়েছে মোহাম্মদ হাছান, মোবারক হোসেন ইমন, খোরশেদ, রায়হান ও বোরহানকে।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সারোয়ার হোসেন বাবলার গাড়ির চালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন নিহত মানিক। আর সারোয়ারের ব্যক্তিগত কাজকর্ম করতেন নিহত আবদুল্লাহ। গত ২৯ মার্চ দিবাগত রাতে প্রাভেটকারে করে নতুন ব্রিজ এলাকায় আড্ডা দিচ্ছিলেন মানিক, সারোয়ার, আবদুল্লাহ, রবিন, হৃদয় ও ইমন।
নতুন ব্রিজ থেকে বাড়ি ফেরার জন্য বহদ্দারহাটের দিকে রওয়ানা হলে রাত ২টার দিকে রাজাখালী ব্রিজের ওপর পৌঁছামাত্র ৬-৭টি মোটরসাইকেল থেকে প্রাইভেটকার লক্ষ্য করে গুলি চালাতে থাকে। গুলিতে গাড়ির পেছনের গ্লাস ছিদ্র হয়ে যায়। তখন মানিক বহদ্দারহাটের দিকে না গিয়ে বাকলিয়া এক্সেস রোড দিয়ে চকবাজারের দিকে যায়।
সোয়া ২টার দিকে চকবাজার থানার নবাব সিরাজউদ্দৌলা সড়কে মানিক গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গাড়ি থামায়। গাড়ির পেছনে থাকা হাছান, ইমন, বোরহান, খোরশেদ ও রায়হানসহ অজ্ঞাতনামা ৬-৭ জন তাদের হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করে। গুলিতে মানিক ও আবদুল্লাহ জখম হয়। গাড়িতে থাকা সারোয়ার এবং ইমন কৌশলে নেমে যায়৷ এরপর গুলি ছুঁড়তে থাকা আসামিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। মানিক ও আবদুল্লাহকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, আসামি সাজ্জাদ এবং তার স্ত্রী তামান্নার পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আসামিরা সারোয়ার হোসেন বাবলা ও তার ছেলেসহ অন্যদের হত্যা করার জন্য নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে প্রাইভেটকারটির পিছু নেন।
ঘটনাস্থল থেকে বেঁচে ফেরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রবিন জানিয়েছিলেন, সাজ্জাদের সঙ্গে সারোয়ারের আগে থেকে দ্বন্দ্ব ছিল। সম্প্রতি সাজ্জাদের গ্রেপ্তার এবং রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝামেলা বেড়েছে। তাই সাজ্জাদের লোকজন সারোয়ারকে খুন করতে এ হামলা চালাতে পারে।
নিহত আবদুল্লাহর মা রাশেদা বেগম জানিয়েছিলেন, মাস দুয়েক আগে ছোট সাজ্জাদ রাউজানে তার ছেলের পায়ে গুলি করেছিল। তাই দুই মাস সে ঘর থেকে বের হতে পারেনি। ঈদের মার্কেট করার জন্য দুই মাস পর ওইদিন বের হয়েছিলেন আবদুল্লাহ।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, বায়েজিদ বোস্তামি, চান্দগাঁও এবং পাঁচলাইশ এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ওরফে ‘বুড়ির নাতি’। হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ ১১টিরও বেশি মামলার আসামি তিনি। বায়েজিদ বোস্তামী থানা-সংলগ্ন হাটহাজারীর শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে সাজ্জাদ।
আলোচিত এইট মার্ডার মামলার মৃত্যুণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি ‘জামায়াত-শিবির ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত সাজ্জাদ আলী খানের সহযোগী হিসেবে এই ‘ছোট সাজ্জাদ’ অপরাধজগতে পা রাখেন।
দীর্ঘদিন পালিয়ে বেড়ানো সাজ্জাদকে গত ১৫ মার্চ রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিংমল থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে তিনি কারাবন্দী রয়েছেন।
আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সারোয়ার হোসেন বাবলা নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার খোন্দকার পাড়ার কালা মুন্সির বাড়ির আব্দুল কাদেরের ছেলে। ছোট সাজ্জাদ ও সারোয়ার হোসেন বাবলার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্যের বিরোধ চলছে। সেই বিরোধের জের ধরে গত বছর তাহসিন নামে এক যুবক হত্যার শিকার হয়।
সারোয়ারের বিরুদ্ধে নগরীর ডবলমুরিং, পাঁচলাইশ ও বায়েজিদ বোস্তামি থানায় হত্যা, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে মোট ১৮টি মামলা রয়েছে। তবে সবগুলোতেই তিনি জামিনে রয়েছেন।