বর্ণিল আয়োজনে রাবি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের পহেলা বৈশাখ উদযাপন

বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে উদযাপিত হলো বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। সকালে বর্ণিল আনন্দ শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু হয় বিভাগের উৎসব কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ছিল উদযাপনের মূল কেন্দ্রবিন্দু। এছাড়াও অন্যান্য অনুষদ ও বিভাগগুলোতেও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপন করা হয় নতুন বছরকে।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) নতুন বছরের প্রথম প্রভাতে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের ঢল নামে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মেতে ওঠে আনন্দ-উৎসবে।
সকাল সাড়ে ১০টায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের উদ্যোগে এক বিশাল বর্ষবরণ শোভাযাত্রা বের করা হয়। “ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড়, তোরা সব জয়ধ্বনি কর”—এই প্রতিপাদ্যে শোভাযাত্রাটি সাজানো হয়। এতে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মোজাম্মেল হোসেন বকুলসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
সকাল থেকেই ঢাক-ঢোল আর গান-বাজনায় মুখর হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। বিভিন্ন বিভাগ ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও বের করা হয় শোভাযাত্রা। শিক্ষার্থীরা কৃষক, জেলে, পাগল, ফেরিওয়ালা, জংলী, সাপুড়েসহ নানা ঐতিহ্যবাহী চরিত্রে সেজে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। কেউ কেউ সাজেন বর-কনে, যা উৎসবে ভিন্নমাত্রা যোগ করে।
শোভাযাত্রা শেষে বিভাগের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় পান্তা-ইলিশের ভোজ। বেলা সাড়ে ১২টা থেকে বিভাগের অনুষদ চত্বরে শুরু হয় বৈশাখী মেলা। মেলায় ছিল ফুল, শরবত, বেলুন, হাওয়াই মিঠাই, পিঠা-পুলি, ফাস্টফুডসহ হরেক রকমের দোকান।
পুরাতন বছরের গ্লানি ভুলে নতুনকে সাদরে বরণ করে নিতে আইন, ইতিহাস, পরিসংখ্যান, দর্শন, নাট্যকলা ও সঙ্গীত, বাংলা, ইংরেজি, ফলিত গণিতসহ প্রায় সব বিভাগই শোভাযাত্রার আয়োজন করে। চারুকলা অনুষদ চত্বর, ফোকলোর চত্বর, টুকিটাকি চত্বর, শহীদুল্লাহ চত্বর ও কলাভবন চত্বর ছিল মানুষের ঢলে লোকারণ্য।
পহেলা বৈশাখ উদযাপন নিয়ে বিভাগের ২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, “আমাদের বর্ষবরণের আয়োজনটি বিভাগ থেকে করা হয়েছে। শোভাযাত্রা দিয়ে শুরু করে পান্তা খাওয়া ও মেলার মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করেছি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আয়োজনটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।”
বিভাগের ১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আসিবুল হাসান শান্ত বলেন, “পহেলা বৈশাখের অনুভূতি একরকম গর্ব, আনন্দ ও নতুন আশায় ভরা। এটি শুধু নতুন বছরের শুরু নয়, আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক মহোৎসব। প্রতি বছরের মতো এ বছরও আমাদের বিভাগ থেকে বর্ণিল আয়োজন করা হয়েছে।”
বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেন বকুল বলেন, “আজকের এই আয়োজন পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়া ফেলেছে। শোভাযাত্রায় বাঙালির ঐতিহ্যের অনেক বিষয় উপস্থাপিত হয়েছে—যেমন ডাকবাক্স, একতারা ইত্যাদি। অনেক দিন পর বিভাগের পক্ষ থেকে এমন আয়োজন হলো। আশা করি, ভবিষ্যতে প্রতিবছর এ আয়োজন অব্যাহত থাকবে।”