চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি : বিনা ভোটে সব পদে জয়ী বিএনপি-জামায়াতপন্থীরা !

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির ২০২৫ সালের নির্বাচনে সকল পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত আইনজীবী ঐক্য পরিষদ প্যানেলের প্রার্থীরা। সমিতির ২১টি পদের বিপরীতে কেবল এই প্যানেলের ২১ জন প্রার্থীই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় এবং যাচাই-বাছাই শেষে তাদের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষিত হওয়ায় ভোটের আর প্রয়োজন হচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ছিল মনোনয়নপত্র সংগ্রহের শেষ দিন এবং শুক্রবার (১১ এপ্রিল) মনোনয়ন জমা ও যাচাই-বাছাই করা হয়। সমিতির মূখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা তারিক আহমদ জানিয়েছেন, ২১টি পদের সবকটিতেই একজন করে প্রার্থী থাকায় এবং তাদের মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়ায় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। ফলে, শনিবার (১২ এপ্রিল) আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিজয়ী ঘোষণা করার কথা রয়েছে। যদিও তফসিল অনুযায়ী ভোটগ্রহণের নির্ধারিত তারিখ ছিল আগামী ১৬ এপ্রিল।
বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম এবং জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত বাংলাদেশ ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল যৌথভাবে ‘আইনজীবী ঐক্য পরিষদ’ নামে এই প্যানেল গঠন করে। এই প্যানেল থেকে সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার এবং সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হাসান আলী চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যান্য সম্পাদকীয় পদের মধ্যে সহ-সভাপতি পদে আলমগীর মোহাম্মদ ইউনূস, সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে মো. ফজলুল বারী, অর্থ সম্পাদক পদে মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, পাঠাগার সম্পাদক পদে তৌহিদুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে আশরাফি বিনতে মোতালেব, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ম. মঞ্জুর হোসেন এবং তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক পদে আবদুল জব্বার নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া সদস্য পদের ১১টিতেও এই ঐক্য পরিষদের প্রার্থীরাই নির্বাচিত হয়েছেন।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা এবার ‘সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ’-এর পরিবর্তে স্বতন্ত্র হিসেবে ‘রশিদ-জাবেদ-মাহতাব পরিষদ’ নামে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিলেও তাদের কোনো প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। এই প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী আইনজীবী মো. আবদুর রশীদ লোকমান অভিযোগ করেছেন, তারা দুই দফায় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে সমিতির লাইব্রেরিতে গিয়ে বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের দ্বারা বাধার সম্মুখীন হন। তিনি আরও জানান, এ বিষয়ে অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ককে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও কোনো সমাধান মেলেনি।
এই অভিযোগের বিষয়ে আইনজীবী ঐক্য পরিষদের নবনির্বাচিত সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার গণমাধ্যমকে বলেন, “আমরা ২১ জন ফরম নিয়েছি। অন্যরা ফরম নিতে না এসেই কুৎসা রটনা করছে। তাদের সৎ সাহস নেই।”
তবে, নির্বাচনী কর্মকর্তা তারিক আহমদ বলেন, “লাইব্রেরিতে মনোনয়ন ফরম দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে কী হয়েছে তা আমরা জানি না।”
উল্লেখ্য, গত ১০ ফেব্রুয়ারি সমিতির পূর্ববর্তী নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। এরপর ১৬ ফেব্রুয়ারি একটি ৫ সদস্যের অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়, যাদের দায়িত্ব ছিল ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা। সেই অনুযায়ী গত ১৮ মার্চ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছিল।
গত বছর (২০২৪) ১১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ঐক্য পরিষদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৩টি পদে জয়লাভ করেছিল। আওয়ামী লীগ সমর্থিত সমন্বয় পরিষদ সহ-সভাপতিসহ ৭টি পদে এবং একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী একটি পদে জয়ী হয়েছিলেন।