নিখোঁজ দুই শিশুর একজনের ঘাড় ভাঙা মরদেহ উদ্ধার

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানা এলাকায় নিখোঁজ দুই শিশুর মাঝে সিফাত (১১) নামের শিশুর মরদেহ পুকুর থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। মরদেহ উদ্ধারের সময় সিফাতের ঘাড় ভাড়া ছিল।
শনিবার (১২ জুলাই) সকালে পাঁচবাগ ইউনিয়নের চর শাখচূড়া গ্রামের একটি পরিত্যক্ত পুকুর থেকে সিফাতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সিফাত একই গ্রামের সৌদি প্রবাসী নূরুল ইসলামের ছেলে।
অপরদিকে একই ইউনিয়নের দিঘীরপাড় গ্রামে শিশু আইমান সাদাবের সন্ধান এখনও মিলেনি। শিশু সাদাব জেলার নান্দাইল উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের বারঘুরিয়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী আল আমিনের ছেলে। সাদাব তার মায়ের সাথে নানার বাড়িতে বসবাস করতেন।
পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহা. ফেরদৌস আলম শিশু সিফাতের মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, নিহত শিশুর বাবা সৌদি প্রবাসী চর শাখচূড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র সিফাত গত শুক্রবার দুপুর থেকে নিখোঁজ ছিল। দিনভর তার স্বজনরা সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করেন। তবে কোথাও তার খোঁজ না পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ও উদ্ধারে অভিযান চালান। কিন্তু কোথাও সিফাতের সন্ধ্যান মেলেনি। সকালে একটি পুকুরে সিফাতের মরদেহ ভাসতে দেখে থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
এদিকে, ফেসবুকে শিশু সিফাতের নিখোঁজ সংবাদ প্রকাশ করে স্বজনরা। এই সুযোগে প্রতারক চক্র অপহরনের কথা বলে নিহত শিশুটির পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণের নামে কিছু টাকা আদায়ও করে নিয়ে যায় বলেও ধারণা পুলিশের।
নিহত শিশু সিফাতের মা সাবিনা আহাজারি করতে করতে বলেন, তার ছেলেকে খুন করে পুকুরে ফেলা হয়েছে। তাদের কোন শক্র নেই। একই গ্রামের শহিদুলের বখাটে ছেলে আরমান তার কলেজ পড়ুয়া মেয়ের সাথে বাড়িতে এসে ঝগড়া করে এবং এরপর তাদের ক্ষতি করার হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল। শিশু নিখোঁজের পর থেকে আরমান (২৪) পলাতক।
ওসি মোহা. ফেরদৌস আলম আরও বলেন, নিখোঁজ আইমান সাদাব নান্দাইল উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের বারঘুরিয়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী আল আমিনের ছেলে। তিনি সৌদি প্রবাসি হওয়ায় সাদাবকে নিয়ে মা সুমাইয়া ছেলেকে বাবার বাড়ি পাগলা থানা এলাকায় বসবাস করতেন।
শিশু সাদাব শুক্রবার দুপুর থেকে নিখোঁজ ছিল।নবাড়ির আশেপাশের সম্ভাব্য সব স্থানে জায়গায় খোঁজাখোঁজি করেও শিশুটির খোঁজ থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। পরে রাতে রাতে দুই দফা একটি নাম্বার থেকে কল দিয়ে সাদাবকে ফেরত দিবে বলে ২৮ হাজার টাকা নেয়। তবে, শিশুকে ফেরত দেয়নি। এরপর থেকে ওই মোবাইল নাম্বার বন্ধ রয়েছে।
নিখোঁজ সাদাবের মা সুমাইয়া আক্তার আহাজারি করে বলেন, থানা পুলিশকে আমার ছেলে নিখোঁজের বিষয়টি জানানো হয়েছে। পুলিশ শুধু বাড়িতে আসে আর চলে যায়। কিন্তু, আমার ছেলের কোন সন্ধ্যান দিতে পারেনি। আমার ছেলে জীবিত থাকতে ছেলের সন্ধ্যান বলে আহাজারি করতে থাকেন।
পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহা. ফেরদৌস আলম বলেন, শিশু সিফাতের ঘটনা অপহরন ও মুক্তিপণের কোন বিষয় নয়। এখানে প্রেম ঘটিত বিষয় থাকতে পারে। আমরা প্রেম ঘটিত বিষয় নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। এদিকে, শিশু সাদাব নিখোঁজের পর একই নাম্বার থেকে দুইবার ফোন করে শিশুকে ফেরত দেবে বলে মুক্তিপন হিসাবে ২৮ হাজার টাকা নিয়েছে। আমরা তার লোকেশন ট্র্যাক করে তার পরিচয় জানতে পারছি। সে অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। চেষ্টা করছি যেন সাদাবকে দ্রুত উদ্ধার করা যায়।
জেলা পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, দুই শিশু একই সময়ে নিখোঁজ হওয়ার পর ঘাড় ভাঙা অবস্থায় পুকুর থেকে এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অপর শিশু সাদাবের সন্ধ্যানে কাজ করছে পুলিশ। যে ব্যক্তি অপহরণের নামে মুক্তিপন নিয়েছে, তার লোকেশন আমরা ট্র্যাক করেছি। সে অনুযায়ী কাজ করছি।