সাবেক এমপি শাহীন চাকলাদারসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে ৮৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা আত্মসাতের মামলা

যশোরের কেশবপুর উপজেলায় একটি কলেজ ও একটি স্কুলের নানা সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নামে ৮৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার শহীদ লে: মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মশিয়ার রহমান এই মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন: শাহীন চাকলাদারের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) শাহপাড়া রোডের আলমগীর সিদ্দিকী টিটো, তার স্ত্রী শামীমা পারভিন রুমা, এবং মাগুরখালী গ্রামের মৃত সোবহান গাজীর ছেলে রবিউল ইসলাম।
যশোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আঞ্জুমান আরা বেগম অভিযোগটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। বাদী পক্ষের আইনজীবী তাহমিদ আকাশ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, শাহীন চাকলাদার এমপি থাকাকালীন সময়ে অন্য আসামিরা যোগসাজশ করে বিভিন্ন অপকর্ম করতেন। তারা নিয়োগ বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য, এমপিওভুক্তকরণসহ বিভিন্ন সুবিধা টাকার বিনিময়ে দিতেন।
সেই সময়ে বাদী মশিয়ার রহমান মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ এবং রেজাকাটি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন। এই সুবাদে তিনি ওই দুই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সুবিধা প্রাপ্তির বিষয়ে আসামিদের সাথে কথা বলেন।
আসামিরা জানান, মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কলেজের স্নাতক ও বিএমপি শাখার এমপিও আদেশ এবং কলেজের কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষকদের এমপিও ছাড় করিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ৬৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা দিতে হবে। এছাড়া, স্কুলের মাধ্যমিক শাখার এমপিও আদেশ করিয়ে দেওয়ার জন্য আরও ২০ লাখ টাকা দাবি করেন।
শিক্ষকদের সাথে আলোচনার পর বাদী রাজি হন এবং তাদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করেন। ২০২০ সালের ২ অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ৩০ আগস্টের মধ্যে আলমগীর সিদ্দিকী টিটোর বাড়িতে বসে শাহীন চাকলাদারসহ আসামিদের হাতে দফায় দফায় এই টাকা দেওয়া হয়। আসামিরা মেশিন দিয়ে টাকা গুনে গ্রহণ করেন এবং পরে শাহীন চাকলাদার সেই টাকা গ্রহণ করেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
আসামিরা ২০২১ ও ২০২২ সালের মধ্যে কাজগুলো সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে কাজগুলো করে দিতে ব্যর্থ হন। পরে আসামিদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা নানা ধরনের টালবাহানা করেন এবং একপর্যায়ে জানিয়ে দেন যে, ওইসব কাজ আর হবে না।
বাদী এরপর মন্ত্রণালয়ে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন যে, ওই চারজন সমস্ত টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। তবে মামলা ও হামলার ভয়ে তিনি আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পাননি।
সম্প্রতি গত ২০ জুন টিটো ও তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বাদী টাকা ফেরত চাইলে তারা জানান যে, টাকা ফেরত দেওয়া হবে না এবং আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসছে বলে নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখান। বাধ্য হয়ে বাদী আদালতে এই মামলাটি দায়ের করেন।