বাগেরহাটে জমে উঠেছে পশুর হাট

বাগেরহাটে ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে জমে উঠেছে পশুর হাট । বাগেরহাটে স্থায়ী-অস্থায়ী ৩৩ টি হাটে এবার কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। জেলার সব থেকে বড় পশুর হাট ফকিরহাটের বেতাগা হাট।কোরবানির পশু ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে সরগরম হয়ে উঠছে হাট। প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে কোরবানির জন্য পশু কিনতে হাটে আসছে নানা বয়সী মানুষ।
দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে বেতাগা পশুরহাট একটি সর্ববৃহৎ হাট হিসাবে বিভিন্ন স্থানে এর সুপরিচিতি রয়েছে। ১২মাস এখানে চলে পশু ক্রয়-বিক্রয়। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, গোপালগঞ্জ, পিরোজপুর, বরিশাল, ভোলা, মাদারীপুর, টেকেরহাট ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান হতে হাজার হাজার ক্রেতা-বিক্রেতা এখানে পশু ক্রয়-বিক্রয় করতে আসেন ।এখানের বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা সন্তোষজনক হওয়া ক্রেতা-বিক্রেতারা দূর-দুরান্ত হতে এখানে আসেন। সপ্তাহে সোমবার ও শুক্রবার এখানে হাট বসে। প্রতিটি ঈদে এই বাজারে বাড়তি বেশ কিছু সুবিধা থাকে। যেমন জাল টাকার শনাক্তের মেশিন, চিকিৎসা সেবা ও পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা সহ নানা সুবিধার কারণে তারা এই হাটকে বেছে নিয়েছেন।
বুধবার (০৪ জুন) সকালের দিকে এই হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়।
চুয়াডাঙ্গায় থেকে আসা ক্রেতা বলেন রাজু আহমেদ বলেন, গরুর দাম স্বাভাবিক অতিরিক্ত বেশি না তবে শুরুর দিকে তো একটু বেশিই চাচ্ছে। আর কেনা বেচা ও বেশি হচ্ছে না। ধরেন ৯০ কেজি গরুর দাম এক লাখ চাই , আগের বছরের তুলনায় কেনাবেচা কম কিন্তু দাম একটু বেশিই চাচ্ছেন।
ফজলুল শেখ বলেন বিক্রেতা বলেন,এই হাটে গরু সরবরাহ বেশ ভালো। কোনো ধরনের সংকট নেই। ক্রেতাদেরও আনাগোনা আছে। আমি গরু নিয়ে আসছিলাম ২৪ টা মাত্র দুইটা গরু বিক্রি করতে পারছি। একটা গরু আমি লসে বিক্রি করেছি। আর একটা ক্যাশ টাকায় বিক্রি করেছি। এখনো আমার ২২ টা গরু রয়েছে । তবে দাম খুব বেশি ভালো পাওয়া যাচ্ছে না।
আর এক বিক্রেতা খুলনার বটিয়াঘাটা থেকে আসা নয়ন শেখ বলেন,খাবার লালন-পালনে অনেক টাকা খরচ হয়। দাম যদি ভালো না পাওয়া যায়, তাহলে খামারিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমি দুইটা গরু নিয়ে আসছি চাচ্ছি ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা হলে বিক্রি করবো। আসলে বাজারে প্রচুর গরু আছে কিন্তু কেনার লোক নাই।
গরু কিনতে আসা বাবলা হেসেন বলেন, গরুর আমদানি ভালো। দামও সহনশীল। ঈদের বেশিদিন বাকি নেই। আমি আর আব্বু আসছি গরু পছন্দ হলে কিনে নিয়ে যাব।
বাগেরহাট পৌরসভার আল- ইসলাহ মাদ্রাসার মুহতামিম মোহাম্মদ উল্লাহ আরিফিন বলেন, এখানে বড় গরুর হাট বসে তাই আসছি।আমরা প্রায় ৪০ টি গরু কিনবো। এখানে গরু আছে প্রচুর কিন্তু দাম মনে হচ্ছে একটু বেশিই চাচ্ছে । দুইটা কিনছি আরো কিনবো। আসলেই ৪০টা গরু কিনবো এতো গরু কেনার কারন হচ্ছে আমার আশেপাশে যারা আমাকে ভালোবাসে তারা আমাকে দায়িত্ব দেয় এবার সবচেয়ে কম অন্য বছরে ৮০-৯০টাও গরু কিনি এ বছর ৪০ টা কিনব বলছে আমি বেশি আর নিতে পারব না। কারণ আবহাওয়া বেশি ভালো না এই কারণে। কোরবানি দিয়ে তাদের ভাগ করে সুন্দর করে তাদের কাছে তাদের আমানত পৌঁছেছে দেই।
বাগেরহাট ফকিরহাটের বেতাগা হাটের পরিচালক এস এম আকরাম হোসেন বলেন, সারা বছর সপ্তাহে দুই-দিন অর্থাৎ শুক্র ও সোমবার এই হাট বসে। দূর-দূরান্ত থেকে খামারি ও ব্যবসায়ীরা যেমন গরু নিয়ে আসে, তেমনি বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতারাও আসেন এখানে গরু কিনতে। হাটে গরুর ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে হাট ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে সি সি ক্যামেরা বসিয়ে বাজারে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তা ও অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে নজরদারি রাখা হচ্ছে।আমাদের তরফ থেকে এখানে পুলিশ আনসার বাহিনীর সদস্যরা রয়েছে যাতে করে একটি লোক সাচ্ছন্দ্য ভাবে গরু বিক্রি করতে পারে এবং কিনে নিতেও পারেন । বাজার মনিটরিং এর লোক রয়েছে এবং স্বেচ্ছাসেবক নিরাপত্তার সাথে দায়িত্ব পালন করছে।কোরবানির হাটে বিশেষ করে টাকা ছিনতাই জাল টাকা, চুরি করা গরু, বিভিন্ন সময় মারামারিও হয়। হাটে জাল টাকা রোধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনো গরু বা ছাগল অসুস্থ হলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।প্রতি সোমবার ও শুক্রবার এই পশুর হাটটিতে গরু ও ছাগল বেচা-কেনা হয়ে আসছে।ঈদ উপলক্ষে হাটটি আরও জমজমাট হয়ে উঠেছে। আজকে ১২০০ গরুর বেশি গরু বিক্রি হয়েছে।
বাগেরহাট জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছাহেব আলী বলেন, বছর কোরবানির জন্য জেলার ৭ হাজার খামারে কোরবানির জন্য প্রস্তুত ৮৫ হাজার ৪৮টি পশু। তবে চাহিদা রয়েছে মোট ৮৪ হাজার ৮৯৭টি পশু প্রস্তুত রয়েছে।এসব গরু ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য স্থায়ী অস্থায়ী ৩৩টি পশুর হাট বসেছে।