ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স্ট্যান্ড রিলিজ, বিধিবর্হিভূত পদায়নে ক্ষোভ-অসন্তোষ

ময়মনসিংহ রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ রোকনুজ্জামানকে স্ট্যান্ড রিলিজ হয়েছেন। একই সঙ্গে চাকরিবিধি প্রতিপালন না করেই বিধিবর্হিভূতভাবে অপর এক শিক্ষককে বদলী ও পদায়ন করা হয়েছে। এনিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে-বাইরে ক্ষোভ অসন্তোষে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
রোববার (২৫ মে) দুপুর সোয়া ২টায় ময়মনসিংহ রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদে সদ্য পদায়ন হওয়ায় ইন্দ্রানী রাণী ঘোষ তাঁর বদলী ও পদায়নের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ২০ মে এক চিঠিতে এই বিদ্যালয় থেকে সদ্য বদলী হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ রোকনুজ্জামানকে স্ট্যান্ড লিলিজের আদেশ দেওয়া হয়।
মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান বলেন, গত ২০ মে আমাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। তবে আমি চিঠি পেয়েছি ২২ মে। কিন্তু আমাকে ২২ মে তারিখে বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি চিলড্রেন পার্ক উচ্চ বিদ্যালয় লালমনিরহাটে যোগদান করতে বলা হয়েছে। এই বিষয়টিও বিধি সম্মত হয়নি। কারণ চিঠিতে আমার স্ট্যান্ড রিলিজের কারণ ব্যাখ্য করা হয়নি এবং পরবর্তী কর্মস্থলে যোগদানের জন্য প্রয়োজনীয় সময় দেওয়া হয়নি।
এর আগে চলতি বছরের গত ২৭ মার্চ ইন্দ্রানী রাণী ঘোষের বদলী ও পদায়ন বিষয়ে বিধি লঙ্গন ও তথ্য গোপনের অভিযোগ রেলওয়ের মহাপরিচালক বরাবরের একটি অভিযোগ দায়ের হয়। ওই অভিযোগে বলা হয়- ইন্দ্রাণী রাণী ঘোষ বাংলাদেশ রেলওয়েতে যোগদান করেছেন ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু ডিপার্টমেন্টাল নিয়োগ প্রজ্ঞাপন প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালের ২৬ জানুয়ারি। এতে দেখা যায়- যখন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয় তখন ইন্দ্রাণী রাণী ঘোষ বাংলাদেশ রেলওয়েতে চাকুরীজিবী হিসাবে কর্মরত ছিলেন না। ফলে তাঁর শিক্ষক নিয়োগে প্রয়োজনীয় শর্তাদি প্রতিপালন হয়নি। সেই হিসাবে ইন্দ্রাণী রাণী ঘোষকে প্রধান শিক্ষক পদে চলতি দায়িত্ব প্রদান বিধিবর্হিভূত এবং আইন সঙ্গত নয়, বলেও অভিযোগ আনা হয়।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ইন্দ্রাণী রাণী ঘোষ বলেন, স্টেশন মাষ্টার থেকে নিয়ম মেনেই আমি বর্তমানে শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছি। আমার নিযোগে কোন ধরনের বিধি লঙ্গন হয়নি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের উপপরিচালক মো. আবরার হোসেন বলেন, ঘটনাটি অবগত হয়েছি। তবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই না করেই চলতি দায়িত্ব প্রদানের প্রসঙ্গটি তিনি এড়িয়ে যান।
সূত্র জানায়, বিগত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদের শাসনে এই বিদ্যালয়টি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। ক্ষমতার প্রভাবি খাটিয়ে তৎকালীন রেলওয়ের দায়িত্বশীলরা ২ জন খন্ডকালীন শিক্ষক, ১ জন অফিস সহকারী এবং ১ জন কম্পিউটার অপরারেট পদে যোগদান দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। সেই সঙ্গে বিদ্যালয়ের আর্থিক হিসাব-নিকাশে রয়েছে ব্যাপক গড়মিল। এরই মাঝে চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি এই বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান। এতেই ঘটে বিপত্তি।
সূত্রটি আরও জানায়, বিধি সম্মত নিয়োগ না থাকার পরও ২ জন খন্ডকালীন শিক্ষক, ১ জন অফিস সহকারি এবং ১ জন কম্পিউটার অপরারেট নিয়মিত বিদ্যালয় থেকে বেতন-ভাতা নিচ্ছেলেন। বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর সম্প্রতি তাদের মৌখিকভাবে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এতে একটি প্রভাবশালী মহল নাখোশ হয়, বলেও দাবি সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
প্রসঙ্গত, ময়মনসিংহ রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৭৮০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এই বিদ্যালয়টি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।