যেসব লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে সম্পর্ক ভাঙতে চলেছে

নতুন সম্পর্ক মানেই উত্তেজনা, ভালো লাগা আর অসাধারণ কিছু মুহূর্ত। দুজন একসঙ্গে থাকতে ইচ্ছা হয়। তবে সময়ের সমগে দেখা যায় সম্পর্ক বদলে যায়। সম্পর্কে থাকা দুজন মানুষের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে। প্রতিটি সম্পর্ক বিভিন্ন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যায়। কিছু সময় দুজনের দূরত্ব দেখা দেয় আর এসব স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু কিছু সময় সম্পর্ক শেষের ইঙ্গিত দেয় দূরত্ব। মনোবিদরা এমন কিছু লক্ষণের উল্লেখ করেছেন যা থেকে বুঝতে হবে সম্পর্ক ভাঙতে চলেছে। হয়তো এই সম্পর্কটা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। ম্যারিজডটকমের এক প্রতিবেদনে মনোবিদরা এ বিষয়ে কথা বলেছেন।
সম্পর্ক না টেকার আগাম ১৫টি লক্ষণ: মনোবিদরা একাধিক লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করেছেন, যা দেখলে বুঝবেন এই সম্পর্ক হয়তো আপনার জন্য নয়। পাশাপাশি রয়েছে কিছু কার্যকর পরামর্শ যেগুলো আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
১. কথা না বলার প্রবণতা:যখন একে অপরের সাথে মনের কথা শেয়ার না করা হয়, তখন সম্পর্কের গভীরতা কমে যায়। একতরফা আলোচনা বা একেবারেই না হওয়া দুটিই বিপদের ইঙ্গিত।
২. ঘন ঘন ঝগড়া: প্রায়ই তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়? ছোটখাটো বিষয়ে বারবার তর্ক হলে সেটা বড় কোনো অসামঞ্জস্যের ইঙ্গিত হতে পারে। একে অপরকে বোঝার অভাব থেকেই এই সমস্যা হয়।
৩. জীবন লক্ষ্য ভিন্ন: যদি আপনারা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় একমত না হন যেমন: বিয়ে, পরিবার, বা ক্যারিয়ার তাহলে দীর্ঘমেয়াদে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। দুজন মানুষের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আলাদা হলে সে সম্পর্ক বেশি দিন টিকে না বলছেন মনোবিদরা।
৪. বিশ্বাসের ঘাটতি: হিংসা, সন্দেহ বা মিথ্যা এই উপসর্গগুলো থাকলে সম্পর্ক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে। বিশ্বাস না থাকলে ভালোবাসাও টিকে না।
৫. একে অপরের জীবনে আগ্রহের অভাব: আপনার সঙ্গী যদি আপনার বন্ধু-বান্ধব, পরিবার বা কাজের প্রতি উৎসাহ না দেখায়—তাহলে বুঝতে হবে তিনি মানসিকভাবে সম্পর্কের প্রতি দায়বদ্ধ নন।
৬. সমস্যা এড়িয়ে চলা: কেউ যদি সমস্যার মুখোমুখি না হয়ে সব কিছু চাপা দেন, তাহলে একসময় সেটা বিষ হয়ে সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলতে পারে।
৭. একতরফা চেষ্টা: যদি সবসময় আপনিই বেশি চেষ্টা করেন, আর সঙ্গী কেবল সুযোগ বুঝে চেষ্টা করেন তাহলে এই ভারসাম্যহীনতা টেকসই হবে না।
৮. নেতিবাচক মন্তব্য: সবসময় খুঁত ধরা, ব্যঙ্গ করা বা ছোট করে কথা বলা এসব আচরণ আত্মসম্মানে আঘাত করে এবং সম্পর্ককে বিষিয়ে তোলে।
৯. নিয়ন্ত্রণ করার প্রবণতা: যখন কেউ আপনাকে আপনার মত থাকতে দেয় না, বন্ধুদের থেকে দূরে রাখে, বা সব সিদ্ধান্ত নিজের মতো নেয় তখন সম্পর্ক হয়ে পড়ে অসুস্থ।
১০. অতিরিক্ত নির্ভরতা: একজন যদি অপরজনের উপর অতিরিক্ত মানসিক নির্ভরতা করে, তাহলে সম্পর্কটা হয়ে পড়ে বোঝা ও ক্লান্তিকর।
১১. অর্থনৈতিক অসমতা: আর্থিক বিষয় নিয়ে অস্পষ্টতা বা অসমান ভার বহন ভবিষ্যতে তিক্ততা সৃষ্টি করতে পারে। অনেক সময় এই বিষয় নিয়ে।
১২. মানসিক দূরত্ব: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানসিক দূরত্ব সম্পর্ক শেষের ইঙ্গিত দেয়। যখন মনের কথা বলতে চান না, কিংবা অনুভব করেন আপনার সঙ্গী আপনাকে ঠিক বোঝে না, তখনই সম্পর্ক ধীরে ধীরে শেষ হতে থাকে।
১৩. যোগাযোগের ধরনে অসামঞ্জস্য: একজন খোলামেলা, আরেকজন চুপচাপ—এই ব্যবধান অনেক সময় বড় সমস্যা তৈরি করে। এই সমস্যা থেকে বারবার ভুল বোঝাবুঝি হয় যা একসময় সম্পর্ক শেষ করে দেয়।
১৪. মূল্যবোধে অমিল: ধর্ম, জীবনধারা বা নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গিতে বড় পার্থক্য থাকলে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
এসব লক্ষণ দেখা দিলে যা করবেন: মনোবিদরা এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে কী করা উচিত সে বিষয়ে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। দূরত্ব বাড়তে থাকলে যা করবেন:-
খোলাখুলি কথা বলুন: আপনার অনুভূতি প্রকাশ করুন শান্তভাবে। বিরক্তি নিয়ে নিজের মনোভাব প্রকাশ না করে একটু শান্ত হয়ে আলোচনা করুন এতে ইতিবাচক কিছু হতে পারে।
সীমা নির্ধারণ করুন: কী মেনে নেবেন, আর কী নয়—তা স্পষ্ট করুন। সময়, স্বাধীনতা, যোগাযোগ সব ক্ষেত্রেই।
সমঝোতার জায়গা খুঁজুন: সব বিষয়ে মিল হবে না, তবে কিছু বিষয় সমঝোতায় আনা সম্ভব। প্রয়োজনে দুইজনেই ছাড় দিন।
পেশাদার সাহায্য নিন: সমস্যা গভীর হলে কাউন্সেলরের কাছে যান। কখনো একজন তৃতীয় ব্যক্তি সম্পর্ক রক্ষা করতে পারে।
নিজেকেও মূল্যায়ন করুন: শুধু সঙ্গীর ভুল দেখলে হবে না, নিজেও নিজেকে প্রশ্ন করুন—আমি কী ঠিক করছি?
সঙ্গীর প্রতিক্রিয়া দেখুন: আপনার উদ্বেগ জানালে সঙ্গী কীভাবে নেয়? গুরুত্ব দেয়, নাকি এড়িয়ে যায়? এখানেই ভবিষ্যতের ইঙ্গিত লুকিয়ে আছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সঙ্গে মিল: আপনার স্বপ্ন আর তার পরিকল্পনা এক পথে যাচ্ছে কি? যদি না যায়, তাহলে সাহস করে আলাদা পথ বেছে নিন।
সম্পর্ক মানে শুধু ভালোবাসা নয়, বরং বোঝাপড়া, শ্রদ্ধা ও মানসিক নিরাপত্তার সংমিশ্রণ। তাই সম্পর্কে এই বিষয়ে জটিলতা দেখা দিলে সাবধান হতে হবে। প্রয়োজনে পরিবর্তন আনুন, আর না পারলে সাহস নিয়ে এগিয়ে যান নতুন জীবনের দিকে। দুজনের মানসিক সুস্থতাই সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।
