বাকুতে সিরিয়া-ইসরাইল গোপন বৈঠক: মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত?

সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারা সম্প্রতি আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে ইসরাইলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপন বৈঠকে অংশ নিয়েছেন—এমন দাবি ঘিরে মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক অঙ্গনে চলছে জোর আলোচনা। যদিও দামেস্ক আনুষ্ঠানিকভাবে এই বৈঠকের খবর অস্বীকার করছে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্সির ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাতে অন্তত একটি বৈঠকে আল-শারার উপস্থিতির কথা নিশ্চিত করেছে সামা টিভি।
এই আলোচনায় ছিল একাধিক স্পর্শকাতর ইস্যু—
ইসরাইল-সিরিয়ার সম্ভাব্য নিরাপত্তা চুক্তি, সিরিয়ায় ইরানের প্রভাব, হিজবুল্লাহর অস্ত্রভাণ্ডার, লেবানন ভিত্তিক ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম এবং গাজা থেকে বিতাড়িত ফিলিস্তিনিদের সম্ভাব্য পুনর্বাসন।
সূত্র অনুযায়ী, আলোচনায় সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসআদ আল-শিবানী এবং নিরাপত্তা সংলাপের দায়িত্বপ্রাপ্ত আহমেদ আল-দালাতি অংশ নেন। ইসরাইলের পক্ষে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের বিশেষ দূত এবং সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
বৈঠকের ভেন্যু হিসেবে আজারবাইজানকে বেছে নেওয়ার পেছনে কৌশলগত কারণ রয়েছে। অঞ্চলটিতে ইরানবিরোধী বার্তা দেওয়ার জন্য ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ উদ্যোগে এই স্থান নির্ধারিত হয়েছে। এর আগেও বাকু ছিল ইসরাইল-তুরস্ক আলোচনাসহ আঞ্চলিক সমঝোতার মঞ্চ।
আলোচনায় দামেস্কে একটি “ইসরাইলি সমন্বয় অফিস” খোলার বিষয়েও আলোচনা হয়। যদিও এটি আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক স্বীকৃতি নয়, তবে ইসরাইল-সিরিয়া সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে। এটি বাস্তবায়িত হলে, ইরান ও লেবাননের হিজবুল্লাহর ওপর চাপ আরও বাড়বে বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের।
বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়ায় রাজনৈতিক পটপরিবর্তন চলছে। আল-শারার অন্তর্বর্তীকালীন নেতৃত্বে দেশটি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। ইসরাইলের সঙ্গে গোপন সংলাপ সেই পরিবর্তনেরই অংশ কি না, তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
আল-শারা গত সপ্তাহে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সাক্ষাৎ করেন। ধারণা করা হচ্ছে, সেই সফরের সময়ই ইসরাইলি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাদা গোপন বৈঠক হয়।
প্রথমদিকে দাবি করা হয়েছিল, আবুধাবিতে ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে আল-শারার বৈঠক হয়েছে। তবে পরে নিশ্চিত হওয়া যায়, ওই সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন। ফলে কিছু প্রতিবেদন নিয়ে সন্দেহের আবহও তৈরি হয়েছে।
ইসরাইল বা সিরিয়ার কোনো পক্ষই এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি। তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, সিরিয়া-ইসরাইল গোপন আলোচনার বিষয়টি সত্য হলে, এটি মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে এক নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যার কেন্দ্র হয়ে উঠছে বাকু।