যুদ্ধ থামলেও প্রশ্ন থেকে গেছে: ইসরায়েল ‘বিজয়ী’, না ইরান ‘অক্ষত’?

১২ দিনের সংঘাত শেষে ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ থেমে গেছে। কিন্তু কার জয়, আর কার পরাজয়—এই প্রশ্নে বিভক্ত বিশ্ব।
মঙ্গলবার রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘ঐতিহাসিক বিজয়’ দাবি করেন। বলেন, “ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র শিল্প ধ্বংস করে দিয়েছি। ইসরায়েলকে হুমকি দেওয়ার ক্ষমতা ইরানের আর নেই।”
অন্যদিকে, তেহরানের ইনকিলাব স্কয়ারে হাজারো মানুষের সমাবেশ। সেনাবাহিনীর সাহসিকতার প্রশংসা, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলবিরোধী স্লোগান। একজোট হয়ে জানিয়ে দিয়েছে—“আত্মসমর্পণ নয়, লড়াই চলবে।”
যুদ্ধের লক্ষ্য পূরণ হয়নি?
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েলের আসল লক্ষ্য ছিল ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস ও দেশটির শাসকদের পতন ঘটানো। কিন্তু দুই লক্ষ্যই হাতছাড়া।
ইরান বিশেষজ্ঞ ওরি গোল্ডবার্গ বলেন, “ফোরদো পরমাণুকেন্দ্রে হামলার আগেই ইরান ইউরেনিয়াম সরিয়ে ফেলেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।” ফলে হামলার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের সরকার রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা করে জনজাগরণ ঘটাতে চেয়েছিল। কিন্তু সে কৌশল ব্যর্থ হয়েছে। বরং উল্টো ইসরায়েল নিজেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে কিছুটা ‘বিচ্ছিন্ন’ হয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ও সমালোচনা
এ যুদ্ধের অন্যতম পক্ষ যুক্তরাষ্ট্রও তীব্র সমালোচনার মুখে। যুদ্ধ থামানোর বদলে সরাসরি ইরানে হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়ে পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংসের দাবি করলেও আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা তথ্যে তা অস্বীকার করা হচ্ছে। ইউরেনিয়াম প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থাপনা রয়ে গেছে বলেই মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা।
‘আক্রান্ত’ কে আর ‘আগ্রাসী’ কে?
বিশ্ব রাজনীতিতে এই যুদ্ধ ইরানকে 'আক্রান্ত' আর ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রকে 'আগ্রাসী' হিসেবে উপস্থাপন করেছে। ইরান শুধু টিকে থাকেনি, বরং সফলভাবে যুদ্ধ ছড়িয়ে দিতে পেরেছে। কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার মাধ্যমে তেহরান জানিয়েছে—ওদের ‘ছুঁতে’ গেলে চুপ করে বসে থাকবে না।
রাজনৈতিক প্রভাব ও ভবিষ্যতের ইঙ্গিত
এই যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় একটি মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। ইসরায়েল যদিও সামরিক সফলতার কথা বলছে, বাস্তবে তেহরান এখনো শাসনক্ষমতায়, আর তাদের পরমাণু সক্ষমতা পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি।
তাই এই যুদ্ধ শেষে একটাই বার্তা উঠে আসছে—যুদ্ধ থেমেছে, কিন্তু অস্থিরতা থামেনি।
