জিলাপি খাওয়ার টাকা চেয়ে প্রত্যাহার হলেন ওসি মনোয়ার

হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজের লাভের অংশ থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এক নেতার কাছে জিলাপি খাওয়ার টাকা চেয়েছেন কিশোরগঞ্জের ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনোয়ার হোসেন। গতকাল সোমবার এ-সংক্রান্ত একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওসি মনোয়ারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
ফোনালাপের অপর পাশে ছিলেন আফজাল হোসেন শান্ত। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইটনা উপজেলার স্থগিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক। শান্ত সদর ইউনিয়নের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ করেছেন। ফোনালাপে ওসি মনোয়ারকে বলতে শোনা যায়, ‘সেফটি সিকিউরিটি দিলাম তো সারা জীবন। তোমরা যে ১৮ লক্ষ টাকার কাজ করে ১০ লক্ষ টাকা লাভ করলা, ১০ টাকার জিলাপি কিনে তো পাবলিকেরে খাওয়ালে না। খাইয়া যে একটু দোয়া কইরা দেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের। তোমার জায়গায় আমি হইলে সুদের ওপরে টাকা আইনা আগে জিলাপি খাওয়াইতাম। দোয়াডা হইলো সবার আগে।’ অডিওতে ওসিকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘ঠিক আছে তাহলে, জিলাপির অপেক্ষায় রইলাম, নাকি?’
এ সময় অপর পক্ষ থেকে বলতে শোনা যায়, ‘শুধু জিলাপি না, অন্য কিছু?’ ওসি বলেন, ‘না না, জিলাপি হইলেই হইব। এক প্যাঁচ আধা প্যাঁচ জিলাপি দিলে হইব। বিভিন্ন পারপাসে হইলে পাবলিক খাইল আর কী, বোঝ না?’ এ সময় ছাত্রনেতা বলেন, ‘বিলটিল পাই, একটা অ্যামাউন্ট দেব নে।’ এ কথার উত্তরে ওসি বলেন, ‘ঠিক আছে। আচ্ছা, আচ্ছা।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইটনা সদর ইউনিয়নের বলদা খেয়াঘাট হতে শেরপুর ব্রিজ পর্যন্ত ১৪৮০ মিটার ডুবন্ত বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প-২-এর ব্রিজ ক্লোজিং ও বাঁধ মেরামত প্রকল্পটির সভাপতি নাজমুল ঠাকুর ও সদস্যসচিব মো. আশরাফুজ্জামান। কমিটির কোথাও শান্তর নাম নেই। পিআইসির কাজটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খাতাপত্রে পিআইসির সভাপতি নাজমুল ঠাকুর ও সদস্যসচিব আশরাফুজ্জামান। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজটি শান্তকে দিয়েছেন। শান্তই এ কাজ বাস্তবায়ন করেছেন।
এসব বিষয়ে শান্ত বলেন, ‘আমার কাছে ওসি সাহেব অনেকবার টাকা চাইছে। ফোনে তো আর সরাসরি বলতে পারে না, তাই একটা ইঙ্গিত ছিল। আপনি দেখেন রেকর্ডিংয়ে আমি বলছি, স্যার বিলটা পেয়ে নিই একটা অ্যামাউন্ট পাঠাইয়া দিমুনে। পরে উনি আচ্ছা কয়বার বলছে শুইনেন। উনি সারা ইটনার মানুষের সঙ্গে এমন করতেছে।’
পিআইসির তালিকায় নাম নেই, তাহলে কীভাবে আপনি বললেন যে এই কাজ আপনার—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘নাজমুল ঠাকুর আমার ব্যবসায়িক অংশীদার। এটা আমার কাজ না। প্রকল্পতে উনাদের নাম আছে। উনারা যেহেতু সবকিছুতে আমার শেয়ারহোল্ডার, সে ক্ষেত্রে ওইটারও শেয়ারহোল্ডার। সবকিছু সামলাতে গিয়ে মানুষ মনে করছে, কাজটা আমি পাইছি। ব্যাপারটা এমনই হয়ে গেছে আরকি। আনঅফিশিয়াল এটার আমি মালিক হয়ে গেছি।’
কুনিয়ার হাওর পিআইসির সভাপতি নাজমুল ঠাকুর বলেন, ‘কাজ মূলত আমার। শান্ত সভাপতিও না, সদস্যসচিবও না। সদস্যেও ওর নাম নেই। সাংবাদিকদের সঙ্গে সে টুইস্ট করতেছে। আমি তাকে না করছি, টুইস্ট করার দরকার নেই। শান্ত আমার ব্যবসায়িক অংশীদার। তাঁর সঙ্গে আমার অনেক কাজই করা হয়। আমি তো বিলই পাইনি এখনো। ১৫% করে দুটা বিল পাইছি। এখানে বিল দেয় ৭০ শতাংশ।’
ওসি মনোয়ার বলেন, ‘একটি স্বার্থবাদী মহল সম্ভবত এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমার কণ্ঠ বলে একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করছে। এটা দুঃখজনক।’
কমিটিতে না থেকে পিআইসির কাজ শান্ত কীভাবে দাবি করে, এমন প্রশ্নের জবাবে ইটনার ইউএনও ও উপজেলা পিআইসি কমিটির সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘আমি তো জানি না। আমি না জেনে পক্ষে-বিপক্ষে কীভাবে স্টেটমেন্ট দেব। কোনোটাই তো আমার দেওয়ার কথা না।’
এ বিষয়ে জানতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি। জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখব। নিয়মিত বদলির অংশ হিসেবে ওসি মনোয়ারকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।’
