দুর্গাপূজার মহাষষ্ঠীতে রাকসু ভোটগ্রহণ: ছাত্র সংগঠনগুলোর তীব্র প্রতিবাদ!

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ ১৩ দিন পিছিয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। এদিন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ উৎসব দুর্গাপূজার সূচনা মহাষষ্ঠী অনুষ্ঠিত হবে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় তিন হাজার সনাতন শিক্ষার্থী কার্যত ভোটের বাইরে চলে যাবে বলে অভিযোগ তুলেছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন।
গতকাল বুধবার (২৭ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ভোট গ্রহণের নতুন তারিখ ঘোষণা করেন। তিনি জানান, তফসিলের কাজে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ভোটের দিন পরিবর্তন করা হয়েছে।
নতুন তারিখ ঘোষণার পর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলছে এমন একটা দিন নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে যেদিন তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার সূচনা ‘মহাষষ্ঠী’।
সনাতন ধর্মাবলম্বী এক শিক্ষার্থী অর্পণ ধর বলেন, “রাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ ২৮ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন, যেদিন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দূর্গাপূজার মহাষষ্ঠী অনুষ্ঠিত হবে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় তিন হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীকে কার্যত ভোট থেকে দূরে রাখার এক অভিনব কৌশল নেওয়া হয়েছে।”
শিক্ষার্থী সৌরভ কর্মকার বলেন, “এটার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বী নয়, ওই সময়ে ক্যাম্পাস ফাঁকা থাকবে। তাহলে ভোট দেবে কারা? আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাবো যেন ভোটের অধিকার থেকে কেউ বঞ্চিত না হয়।”
শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী ফেসবুকে লিখেন, “হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বড় উৎসব ও ক্যাম্পাস ছুটির আগের দিনে রাকসুর ভোট নির্ধারণ কোনো কাকতালীয় নয়, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্র। এতে হিন্দু শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কঠিন করা হয়েছে এবং ছাত্রদলকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই ভ্রাতৃত্ব-বিরোধী মানসিকতাকে ধিক্কার!”
শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, “আমাদের মনে হয় নির্বাচন বানচালের অংশ হিসেবে কমিশন একতরফাভাবে একটি দলের দাবিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে অন্যান্য সংগঠন ও প্রার্থীরা অসন্তুষ্ট। আমরা আশা করি কমিশন ঘোষণাটি দ্রুত প্রত্যাহার করে নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন আয়োজন করবে।”
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল বলেন, “সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উৎসব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটির কারণে অনেক শিক্ষার্থী ভোট দিতে পারবে না, ফলে একটি অংশকে রাকসু থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে যা মৌলবাদী গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে পারে।”
ছাত্র ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ কায়সার আহমেদ বলেন, “রাকসু নির্বাচনের সময়সীমা বৃদ্ধি ও ভোটের তারিখ পরিবর্তনের পেছনে দুটি লেজুড়বৃত্তিক সংগঠনের প্রভাব রয়েছে। প্রশাসনের একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের যোগসাজশ না থাকলে মহালয়ার দিনে ভোটের তারিখ ঘোষিত হতো না। এতে ক্যাম্পাসের বড় একটি অংশ বাদ পড়বে, যা সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে অসম্ভব করে তুলবে।”
তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন, “২৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকবে। ২৯ সেপ্টেম্বর পাঠদান বন্ধ থাকলেও অফিস কার্যক্রম চলবে। যেহেতু পূজা মূলত অক্টোবর মাসে শুরু হবে, তাই পূজার ছুটিকে সম্মান জানিয়েই এই তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।”
আজ নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৪ থেকে ৩১ আগস্ট মনোনয়নপত্র বিতরণ, ১ থেকে ৪ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিল, ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই, ১১ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ, ১৪ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক তালিকা সম্পর্কে প্রার্থীদের আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তি, ১৫ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার, ১৬ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ এবং ২৮ সেপ্টেম্বর একাডেমিক ভবনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোটগ্রহণ শেষে একই দিন ফলাফল প্রকাশ করা হবে।