মাভাবিপ্রবিতে ঢাকামুখী বাস নেই, অভিযোগ বৈষম্যের

টাঙ্গাইলে অবস্থিত মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি) রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ৮০ কিলোমিটার দূরে হলেও এখনও পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কোনো বাস সার্ভিস চালু হয়নি। ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর পেরিয়ে গেছে ২৬ বছর, কিন্তু এতদিনেও শিক্ষার্থীদের ঢাকায় যাতায়াতের এই মৌলিক চাহিদা পূরণে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
ঢাকা দেশের শিক্ষা, চাকরি, গবেষণা, ওয়ার্কশপ ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতার কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় মাভাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের সেখানে নিয়মিত যাতায়াতের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু নিজস্ব বাস না থাকায় শিক্ষার্থীরা বেসরকারি পরিবহনের উপর নির্ভরশীল, যা সময়, অর্থ এবং নিরাপত্তার দিক থেকে সমস্যা তৈরি করছে।
“ঢাকার এত কাছেও নেই আমাদের বাস”—শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাইফুল্লাহ রাজন বলেন,
“আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক মেধাবী ও উদ্যমী শিক্ষার্থী রয়েছে, যারা দেশ-বিদেশে নিজেদের অবস্থান তৈরি করছে। সম্প্রতি আমাদের আইসিটি বিভাগের কয়েকজন একটি রোবটিক্স প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কিন্তু ঢাকার সঙ্গে সরাসরি যাতায়াতের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক প্রতিযোগিতা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ বা ইন্ডাস্ট্রির সংযোগের সুযোগ আমরা হারাচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস কুমিল্লা পর্যন্ত যায়, গোপালগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ঢাকার বাইরে চলে যায়। অথচ আমরা ঢাকার এত কাছাকাছি থেকেও কোনো বাস সুবিধা পাচ্ছি না। এটি শুধু বৈষম্য নয়, বরং আমাদের সম্ভাবনার পথে বড়ো বাধা।”
ইনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী রায়হান এস মাহমুদ বলেন,
“ক্যাম্পাসে প্রয়োজনীয় রেফারেন্স বইয়ের অভাব রয়েছে, যা নীলক্ষেত থেকে সংগ্রহ করা যায়। চাকরির প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন শিক্ষামূলক কাজে ঢাকায় নিয়মিত যাতায়াত দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব একটি বাস যদি সপ্তাহে অন্তত একদিন ঢাকায় চলত, তাহলে সেটি আমাদের জন্য অনেক বড় সহায়তা হতো।”
তিনি আরও বলেন, “ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে প্রচুর দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। নিজস্ব বাস থাকলে যাতায়াত যেমন নিরাপদ হতো, তেমনি অর্থনৈতিক দিক থেকেও শিক্ষার্থীরা উপকৃত হতো। একইসাথে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখত।”
প্রশাসনের ভাষ্য: বাজেট ঘাটতিই প্রধান বাধা
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুল বাশার বলেন,
“গত অর্থবছরে জ্বালানির জন্য পর্যাপ্ত বাজেট থাকলেও অতিরিক্ত সময়ের ভাতা ও বাস মেরামতের জন্য বাজেট ঘাটতি ছিল। এখনও পাঁচ মাসের ওভারটাইম ভাতা বকেয়া রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নতুন কোনো বাস সার্ভিস চালুর মতো আর্থিক সক্ষমতা নেই।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে উপাচার্য মহোদয় ইন্টারিম সময়ের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত, ফলে নতুন বাজেট অনুমোদন হয়নি। আগের বরাদ্দ দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে বাজেট পর্যাপ্ত হলে ঢাকামুখী বাস চালুর বিষয়টি আমরা অবশ্যই বিবেচনায় আনব।”
গণস্বাক্ষরেও আসেনি সমাধান
ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মাওনাসহ আশপাশের জেলা থেকে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী মাভাবিপ্রবিতে ভর্তি হয়। তাদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোসংবলিত একটি বাস ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে নিয়মিত চলাচল শুরু করলে তা শুধু যাতায়াত নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি ও ভাবমূর্তিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
উল্লেখ্য, এর আগেও শিক্ষার্থীরা ঢাকামুখী বাস সার্ভিস চালুর দাবিতে গণস্বাক্ষরসহ একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলেও বাজেট ঘাটতির অজুহাতে বছরের পর বছর ধরে এই যৌক্তিক দাবি অবহেলিতই রয়ে গেছে।
