রিপনুল হাসানের ব্যক্তিগত দায় নেবে জুয়েলারি সমিতি

বহু অন্যায় ও দূর্নীতির হোতা, চিহ্নিত স্বর্ণ চোরাকারবারী, জুয়ার ব্যবসায়ী, ৫ আগস্টের পর দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তুলতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগকে অবৈধ অর্থের যোগান দাতা এবং হত্যা মামলার আসামী চুয়াডাঙ্গার সন্তান রিপনুল হাসানের ব্যক্তিগত দায় ও দোষের কারণে জুয়েলারী ব্যবসায়ীরা কুক্ষিগত হতে পারে না।
এ কথা গুলো সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা জুয়েলারী সমিতির নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) ঢাকা কার্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গুলজার আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায় এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য জুয়েলারী দোকান বন্ধের যে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে তারই প্রতিবাদে চুয়াডাঙ্গা জেলা জুয়েলারী সমিতির নেতৃবৃন্দ এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন ব্যক্তির অপরাধের দায়, সংগঠন নেবে না।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২৯ মে ) বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ জুয়েলারী সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার উদ্যোগে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সংগঠনের যুগ্মআহ্বায়ক শেখ সাদী। এসময় তিনি জানান, 'গত বুধবার (২৮ মে) এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গুলজার আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায় বৃহস্পতিবার (২৯ মে) থেকে দেশের সকল জুয়েলারী প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছেন। মূলত বাজুসের সহসভাপতি রিপনুল হাসানকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে এই কর্মসূচীর ডাক দেয়া হয়েছে। আমরা প্রান্তিক পর্যায়ের জুয়েলারী ব্যবসায়ী। মফস্বল এলাকায় আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আমরা নিয়মিত বাজুসের সকল নির্দেশনা মেনে থাকি। তবে বর্তমানে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের দ্বিমত আছে। যে ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে এই কর্মসূচীর ডাক দেয়া হয়েছে, তার বাড়ি আমাদের জেলা চুয়াডাঙ্গাতেই। তার বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের পর দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তুলতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগকে অবৈধ অর্থের যোগান দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাকারবারসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে এক ব্যক্তি নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা রয়েছে। এছাড়াও, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে সংগঠিত করতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগসহ কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে অবৈধ অর্থের যোগান দেয়ার অভিযোগসহ কমপক্ষে চারটি মামলা রয়েছে।
মামলাগুলো হলো-(১) ডিএমপির পল্টন থানার, এফআইআর নম্বর ৩৯, তারিখ ২৯ এপ্রিল, ২০২৫: জিআর নম্বর ২০৫, ধারা- ১৪৩/১৪৪/১৪৭/১৪৮/৩২৪/৩২৫/৩২৬/৩০৭/১০৯/৩৪। (২) ডিএমপির পল্টন থানার এফআইআর নম্বর ২৬, তারিখ ১৬ মার্চ, ২০২৫; জিআর নম্বর ১৩৪, ধারা- ৩০২/১৪৯/১৪৮/১৪৭/১৪৩/১২০২/৩৪/১০৯। (৩) ডিএমপির পল্টন খানার এফআইআর নম্বর ১৭, তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫; জিআর নম্বর ৭৯, ধারা-৩০২/১০৯/। (৪) ডিএমপির পল্টন ঘানার এফআইআর নম্বর ১৬ তারিখ ১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৫০৬/১০৯। ২০২৫: মে, ০৬ নম্বর জিআর।
কদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আযহা। মফস্বল এলাকায় আমাদের মতো ব্যবসায়ীরা উৎসব-পার্বনে বেচাকেনা করে। ঠিক ঈদের কয়েকদিন আগে, অনিদিষ্টকালের জন্য জুয়েলারী প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের পেটে লাথি মারার সিদ্ধান্ত। সাংগঠনিকভাবে সংগঠনের সকল নির্দেশনা মেনে নিতে আমরা বদ্ধ পরিকর। কিন্তু পেটে লাথি মারার এই সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নিতে পারিনা। বহু অন্যায় ও দূর্নীতির হোতা, চিহ্নিত স্বর্ণ চোরাকারবারী, জুয়ার ব্যবসায়ী এবং হত্যা মামলার আসামী রিপনুল হাসানের ব্যক্তিগত দায় ও দোষের কারণে জুয়েলারী ব্যবসায়ীরা কুক্ষিগত হতে পারে না। আমরা মনে করি, বাজুসের এই সিদ্ধান্ত একজন ব্যক্তিকে বাঁচাতে গিয়ে আমাদের মতো হাজার হাজার জুয়েলারী ব্যবসায়ীর পেটে লাথি মারা হবে। ইতোমধ্যে চুয়াডাঙ্গার ব্যবসায়ীরা এই প্রতিবাদ জানিয়ে জুয়েলারী প্রতিষ্ঠান খোলা রেখেছে। বাজুস কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মানিত নেতৃবৃন্দের কাছে আমাদের আকুল এবং উদ্বাত্ত আহ্বান, অতিদ্রুত-এই মূহুর্তে বাজুসের দেয়া জুয়েলারী প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা প্রত্যাহার করতে হবে। ব্যক্তির দোষের কারণে সাধারণ ব্যবসায়ীদের পেটে লাথি মারা চলবে না। ব্যক্তির অপরাধের দায়, সংগঠন নেবে না।
সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জুয়েলারী সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি লতিফুল ইসলাম, সদস্য আসলামুল হক মুকুল, আকরামুল রহমান, মাসুম কামাল, নিজাম উদ্দিন, কামরুজ্জামান খোকা ও রনজিৎ কুমার।