গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে প্রাণ হারিয়েছে ৫৮ হাজারের বেশি, প্রতিদিন পা হারাচ্ছে অন্তত ১০ শিশু

গাজা উপত্যকায় প্রায় দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েলি সামরিক অভিযান এখনো অব্যাহত রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫৮ হাজার ৫০ জন মানুষ, যাদের বড় অংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩৫৫ জন, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থা ইউএনওএইচসিএইচআর এক্স (সাবেক টুইটার) প্ল্যাটফর্মে দেওয়া এক বার্তায় জানিয়েছে, গাজায় প্রতিদিন গড়ে ১০ জন শিশু একটি বা দুটি পা হারাচ্ছে। এ তথ্য ‘গ্লোবাল প্রোটেকশন ক্লাস্টার’ নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার বরাতে তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৪০ হাজার ৫০০ জনের বেশি শিশু আহত হয়েছে। যুদ্ধকবলিত এই অঞ্চলটিতে বিস্ফোরণ ও গোলাবর্ষণের কারণে শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন আরও অন্তত ৩৫ হাজার মানুষ।
২০ মাস ধরে চলা সংঘাতে গাজার মানবিক ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। প্রোটেকশন ক্লাস্টারের তথ্য অনুযায়ী, হামলা ও বাধার মুখে জরুরি সাড়া দেওয়ার সক্ষমতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসাসেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের ওপর পদ্ধতিগতভাবে হামলা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ১ হাজার ৫৮০ জন স্বাস্থ্যকর্মী এবং ৪৬৭ জন মানবিক সহায়তাকর্মী। ধ্বংস হয়ে গেছে বহু স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পুনর্বাসন ইউনিট। বর্তমানে গাজার মাত্র ৪৭ শতাংশ হাসপাতাল আংশিকভাবে কার্যকর রয়েছে।
প্রতিবেদন বলছে, গাজায় বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্টি হওয়া প্রায় ৫০ কোটি টন ধ্বংসস্তূপের নিচে ছড়িয়ে আছে বিপজ্জনক অবিস্ফোরিত দ্রব্য, যা বিশেষ করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য চরম ঝুঁকির সৃষ্টি করছে। গাজার ৮৩ শতাংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি তাদের সহায়ক যন্ত্রপাতি হারিয়েছেন এবং ৮০ শতাংশ বয়স্ক মানুষ প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত।
চলাফেরার স্বাধীনতা ও মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার এখন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত, ফলে জীবনরক্ষাকারী ও চিকিৎসাসংক্রান্ত সহায়তা গাজার মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, সামরিককরণকৃত ও অনিরাপদভাবে পরিচালিত খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলো মানুষের মধ্যে আরও অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি তৈরি করছে। এতে সংকটকবলিত জনগোষ্ঠী আরও গভীর মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ছে।