‘গ্রে ডিভোর্স’ কী? কেন পরিণত বয়সে আলাদা হয়ে যাচ্ছেন দম্পতিরা

৫০ বছর বা তার বেশি বয়সী দম্পতিরা বহু বছর একসঙ্গে থাকার পর আলাদা হয়ে গেলে তাকে বলে গ্রে ডিভোর্স। বিল গেটস, এ আর রাহমান বা আমির খানের মতো তারকা ও ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে যেমনটা দেখা গেছে। এ ধরনের বিচ্ছেদ বাড়ছে। কেন বাড়ছে গ্রে ডিভোর্স আর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া মানুষের জীবনে প্রভাবই বা কী পড়ছে।
কেন ঘটছে গ্রে ডিভোর্স?
আবেগের ঘাটতি
আগে মানুষ সমাজ বা দায়িত্বের কথা ভেবে সম্পর্ক বা বিয়ে করতেন। তখন মনের মিল বা ভালোবাসার গভীরতার মতো বিষয়কে অতটা গুরুত্ব দেওয়া হতো না। কিন্তু এখন সবাই এমন সঙ্গী চান, যাঁকে তিনি বুঝতে পারবেন আর যিনি তাঁকে বুঝবেন। তাই অনেক সময় আবেগের ঘাটতি দেখা যায়।
এম্পটি নেস্ট সিনড্রোম
গ্রে ডিভোর্সের আরেকটা বড় কারণ হলো এম্পটি নেস্ট সিনড্রোম। যখন সন্তানেরা পড়ালেখা, চাকরি, বিয়ে বা অন্য কোনো কারণে মা-বাবার কাছ থেকে দূরে চলে যান, তখন বয়স্ক মা-বাবার মনে যে শূন্যতা, মনোবেদনা আর আবেগগত জটিলতা তৈরি হয়, তাকে বলে এম্পটি নেস্ট সিনড্রোম। অনেক দম্পতি শুধু সন্তান মানুষ করার জন্য একসঙ্গে থাকেন। কিন্তু যখন সন্তানেরা বড় হয়ে আলাদা হয়ে যান, তখন একসঙ্গে থাকার আর কোনো সাধারণ ক্ষেত্র থাকে না। ফলে দুজনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে।
অবিশ্বাসের ঘেরাটোপ
সম্পর্কে একসময় সন্দেহের বীজ বড় হতে থাকে। প্রতিনিয়ত একে অন্যকে সন্দেহ করতে থাকেন সঙ্গীরা। ফলে অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়। আবার অনেক সময় সঙ্গীর সঙ্গে আবেগগত বা শারীরিক সম্পর্কে ঘাটতি দেখা দেয়, তখনো সঙ্গী অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়াতে পারেন। এতে দাম্পত্য জীবনে সমস্যা তৈরি হয়।
আর্থিক দ্বন্দ্ব
এটি একটি বড় সমস্যা। আগে অনেক নারীই আর্থিক বিষয়ে পুরুষের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। কিন্তু এখন অনেকেই স্বাবলম্বী। আর্থিক দিক থেকে তাঁরা স্বাধীন। ফলে অবসরপরবর্তী পরিকল্পনা বা আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে দম্পতির মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।
মানসিক চ্যালেঞ্জ
একাকিত্ব ও পরিচয়সংকট
এ ধরনের বিচ্ছেদের সবচেয়ে বড় মানসিক চ্যালেঞ্জ হলো নিজের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন, ‘আমার সঙ্গী যদি না থাকে, তাহলে আমি কে?’ অনেক বছর একসঙ্গে থাকার পর যদি বোঝা যায় যে মনের সঙ্গে মনের আর মিল নেই, তখন একা এক নতুন জীবন শুরু করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে।
সমাজের কটুকথা
অনেক সময় ডিভোর্সিদের সমাজের খারাপ মন্তব্য সহ্য করতে হয়। এতে মানুষ আরও একা হয়ে পড়ে। পাড়াপ্রতিবেশী বা আত্মীয়স্বজনেরা বলাবলি করেন, ‘এই বয়সে ডিভোর্স?’, ‘এখন তো জীবন শেষের পথে!’ এ রকম মন্তব্য শুনে মানসিক কষ্ট আরও বেড়ে যায়।
ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয়
ডিভোর্সের পর অনেকেই দুশ্চিন্তা করতে থাকেন, ‘আমি একা থেকে যাব না তো?’, ‘মনের মতো আর কাউকে কি পাব?’, ‘জীবনটা কাকে নিয়ে কাটাব?’ এ রকম ভাবনা মনে ভয় আর দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দেয়। এতে মন আরও অস্থির হয়ে যায়।
মানসিক স্বাস্থ্যে গ্রে ডিভোর্সের প্রভাব
ডিভোর্সের পর কেমন লাগবে, তা অনেকটা ব্যক্তির জীবনের ওপর নির্ভর করে। যিনি ব্যস্ত জীবনযাপন করেন, স্বাধীনচেতা বা যাঁর জীবন আনন্দে ভরা, তিনি নতুন আশা নিয়ে ভালো থাকতে পারেন। কিন্তু যাঁর পাশে কেউ নেই; না বন্ধু, না পরিবার, না টাকার জোর, তাঁরা দুঃখ, হতাশা, একাকিত্ব আর মানসিক চাপের মধ্যে পড়ে যেতে পারেন। এসবের প্রভাব শরীরেও পড়তে পারে।
কীভাবে মানিয়ে নেওয়া যায়?
প্রতিদিন একটা রুটিন মেনে চলুন, কোনো কাজে সক্রিয় থাকুন। পুরোনো বন্ধুদের খোঁজখবর নিন, নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে কথা বলুন। মানুষের সঙ্গে থাকলে মন ভালো থাকে, একা লাগে না।
নিজের জমানো টাকা থাকুক না থাকুক, বুঝেশুনে টাকা খরচ করুন। খরচ কমান, সঞ্চয় করুন আর ভবিষ্যতের জন্য একটা ভালো পরিকল্পনা করুন। এতে দুশ্চিন্তা কমবে।
জীবন গুছিয়ে তুলতে কোনো কাউন্সেলরের সাহায্য নিতে পারেন। কথা বললে মন হালকা হয়, সঠিক পথে এগোনো সহজ হয়। সাহায্য নেওয়া দুর্বলতা নয়, বুদ্ধিমানের কাজ।
ডিভোর্সের পর জীবন নতুনভাবে শুরু করতে চাইলে আগে ভাবতে হবে আপনি আগে কেমন ছিলেন, আর এখন কী হতে চান।
প্রথমে নিজের যত্ন নিন, প্রতিদিনের একটা রুটিন তৈরি করুন আর নিজের ওপর বিশ্বাস করতে শিখুন। এরপর ভাবুন, এখন আপনি কী করতে চান।
নতুন কিছু শিখবেন? কোনো শখ মেটাবেন নাকি সমাজসেবা করবেন, সেটা আগে ঠিক করুন।
নতুন কিছু শেখারও এটা ভালো সময়, যেমন চাকরির জন্য দক্ষতা বাড়ানো বা নিজের উন্নতি করা।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
