যাত্রাবিরতির সিরিজটি কেন খেলছে বাংলাদেশ

আকাশপথে পৃথিবীর নানা দেশ ভ্রমণ করার ক্ষেত্রেই দুবাইয়ে যাত্রাবিরতি আছে। বাংলাদেশ থেকে কারও পাকিস্তানে যেতে হলে তা হয়ে যায় বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশ থেকে সরাসরি যে পাকিস্তানে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। পাকিস্তানে পাঁচ টি-টোয়েন্টি খেলতে যাওয়া বাংলাদেশকে মাঝরাস্তায় পেয়ে যাওয়ার সুযোগটা নিতে চেয়েছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্রিকেট কর্তারা।
বিসিবির কাছে একটা প্রস্তাবটা রেখেছিল আমিরাত ক্রিকেট বোর্ড—দুই টি-টোয়েন্টির একটি সিরিজ খেলতে চায় তারা। বিসিবিও হিসাব করে দেখেছে, বাংলাদেশের জন্যও এটা লাভজনকই। তাই আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুই ম্যাচের ‘যাত্রাবিরতি’র সিরিজ! যা শুরু হচ্ছে আজ।
এ বছরের শেষে এশিয়া কাপ আর আগামী বছরে শুরুতে বিশ্বকাপের ঠিকানা বদলে গেলে, সম্ভাব্য বিকল্প ভেন্যু হিসেবে এগিয়ে থাকার কথা আরব আমিরাতেরই। এর সঙ্গে নতুন যাত্রায় যত বেশি সম্ভব টি-টোয়েন্টি খেলতে চাওয়ার একটা কারণ তো আছেই—এ বছরই যেমন ১৯ টি-টোয়েন্টি খেলবে বাংলাদেশ, শুরুটা হচ্ছে আরব আমিরাতের এই দুটি ম্যাচ দিয়েই।
এ সংস্করণের নতুন চক্রে অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশ বেছে নিয়েছে লিটন দাসকে। জানুয়ারিতে নাজমুল টি-টোয়েন্টি সংস্করণের দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিলেও নেতৃত্বে লিটনের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে এই সিরিজের আগে। কারও চোটে, কারও হঠাৎ অবসরে নেতৃত্বের ভারটা আগেও তাঁর কাঁধে উঠেছে। কিন্তু কখনো তা দু-তিন ম্যাচের বেশি স্থায়ী হয়নি। তিন সংস্করণে মিলিয়ে ১২ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করে ফেলা লিটনের জন্য তাই এটা নতুন শুরুই—লম্বা সময়ের জন্য যে আগে কখনো নেতৃত্ব তিনি পাননি।
নিজামের শহরে বাংলাদেশের সেই প্রথম ওয়ানডে জয়
আগামী বিশ্বকাপ পর্যন্ত দায়িত্ব পাওয়ার পর বড় সময়ের জন্য পরিকল্পনা করতে পারার একটা স্বস্তি লিটনের কণ্ঠে শোনা গিয়েছিল আরব আমিরাতের উদ্দেশে দেশ ছাড়ার আগেই। এর সঙ্গে খেলা বোঝার ক্ষমতা, ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিতে পারার দক্ষতা আর পরিষ্কার ভাবনা ঘিরে যে প্রশংসা এত দিন তাঁকে নিয়ে শোনা গেছে নানাজনের কণ্ঠে, তা এবার সবাইকে দেখানোর সুযোগটাও পেয়েছেন। সেদিক থেকে আজ শারজায় অধিনায়ক লিটনের নতুন এক শুরু।
সর্বশেষ সিরিজে নাজমুলের চোটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। লিটনের অসাধারণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্যারিবীয়দের ধবলধোলাই করেছিল তাদের মাঠেই। টেস্টেও যে একটি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন, জিতেছেন। ওয়ানডেতে সাত ম্যাচে জয় তিনটি। এরপরও এবার লিটনের সামনে চ্যালেঞ্জটা অনেক। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাকিরা যে ছন্দে খেলে, বাংলাদেশ তা থেকে বেশ দূরে দাঁড়িয়ে। সেই ব্যবধান কমিয়ে এনে এগিয়ে যাওয়ার লড়াইটা তাঁকে তাই লড়তেই হবে। লিটন অবশ্য জানিয়ে গেছেন, তাঁর দলের খেলার নির্দিষ্ট কোনো ব্র্যান্ড নেই। যেদিন যা দরকার, তা করাই কাজ হবে সব ক্রিকেটারের।
দলের জন্য ছাড় দেওয়ার এ উদাহরণ সবার আগে তৈরি করছেন লিটন নিজেই—পাঁচ ওপেনারের স্কোয়াডে নিজে তিনে ব্যাটিং করেছেন। এখন থেকে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে তাঁর জন্য এটা হয়ে যেতে পারে স্থায়ী জায়গাও। তাতেও অবশ্য স্বস্তি নেই বাংলাদেশের নতুন অধিনায়কের—সর্বশেষ ছয় ইনিংসে তাঁর ব্যাটে ফিফটি নেই, শেষ তিন ইনিংসও এমন—০, ৩, ১৪। অধিনায়কত্বের চাপের প্রভাব ব্যাটিংয়ে পড়ে কি না, সেই সংশয় তো থাকেই। এ ক্ষেত্রে লিটনের ব্যাখ্যা—এত দিন যখন নেতৃত্ব ছিল না, তখনো যে ব্যাট হাতে খারাপ সময় যায়নি, তা তো নয়! লিটনের মনোযোগটা তাই অধিনায়কত্বেই।
এ যাত্রায় প্রথম প্রতিপক্ষ সহজই হওয়ার কথা লিটনের জন্য। এর আগে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে আরব আমিরাতের বিপক্ষে বাংলাদেশ যে তিনটি ম্যাচ খেলেছে, সব কটিতেই জয় পেয়েছে। শক্তিতেও দুই দলের ব্যবধানটা স্পষ্ট। বাংলাদেশের পেসাররা এখন বিশ্বমানের, ব্যাটসম্যানদের জন্যও বড় কোনো চ্যালেঞ্জ নিয়ে হাজির হওয়ার সম্ভাবনা আমিরাতের বোলারদের মধ্যে তেমন কেউ নেই। যাত্রাবিরতির সিরিজে নতুন শুরু করতে যাওয়া লিটনের তাই আশা একটু বড়ই হওয়ার কথা—লম্বা ভ্রমণের পথে হাঁটার শুরুতে স্বস্তির জয় পেলে তা আত্মবিশ্বাস জোগাবে তাঁকে।