রাবি'র প্রাক্তন শিক্ষার্থী রাসেলকে চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলায় হয়রানির অভিযোগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রাশেদুল ইসলাম রাসেলকে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার বড় ভাই তরিকুল ইসলাম। রবিবার (৩ আগস্ট) দুপুর ১২টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে রাশেদুলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে তরিকুল জানান, তিনি ও তার ভাই রাশেদুল— উভয়েই রাবির সাবেক শিক্ষার্থী এবং তাঁরা নগরের তালাইমারি এলাকার প্রফেসর পাড়ায় বসবাস করেন।
তিনি অভিযোগ করেন, তাদের প্রতিবেশী ছানোয়ারুল ইসলাম রাঙা, যিনি বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশনের একজন কর্মকর্তা ও ডায়মন্ড টাওয়ারের মালিক, রাজউকের অনুমতি ছাড়াই তাদের বাড়ির পাশেই আটতলা একটি ভবন নির্মাণ করেছেন যা একটি মহিলা ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ছয়তলা পর্যন্ত অনুমতি থাকলেও আটতলা নির্মাণ করে এবং চারপাশে পর্যাপ্ত জায়গা না রেখে ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। এ ছাড়া ছাত্রাবাসের বাসিন্দাদের কারণে তাদের বাড়ির আঙিনা, ছাদ ও বারান্দায় নিয়মিত ময়লা, এমনকি ব্যবহৃত স্যানিটারি ন্যাপকিন পর্যন্ত নিক্ষেপ করা হয়।
সমস্যার সমাধান চেয়ে রাশেদুল বোয়ালিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন। এরপর রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)-এর কাছে লিখিত অভিযোগ করা হলে, সংস্থাটি তদন্ত করে ছানোয়ারুল ইসলামকে ২৫ জুন চিঠি দিয়ে এবং ৯ জুলাই শুনানিতে ডেকে পাঠায়। তবে তিনি আরডিএ’র ডাকে সাড়া দেননি।
তরিকুল ইসলামের দাবি, এই ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ছানোয়ারুল ও তার স্ত্রী রাশেদুলকে আর্থিক প্রলোভন, ভয়ভীতি এবং মিথ্যা মামলার হুমকি দিতে শুরু করেন। এমনকি তাদের ম্যানেজারের অফিস থেকে টাকা চুরির মিথ্যা অভিযোগে রাশেদুলকে ফাঁসানোরও হুমকি দেওয়া হয়।
অবশেষে ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ৮টার দিকে তালাইমারির নিজ বাসা থেকে রাশেদুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় বাসায় শুধুমাত্র তাঁদের মা ছিলেন এবং গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ কোনো ওয়ারেন্ট দেখায়নি। পুলিশ জানায়, থানায় গিয়ে ওয়ারেন্ট দেখাবে।
সংবাদ সম্মেলনে তরিকুল ইসলাম বলেন, "আমার ভাইকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দুটি চাঁদাবাজির মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। একটি মামলায় তিন লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়েছে এবং অন্যটিতে ৩৬ জনের নাম থাকলেও অপ্রাসঙ্গিকভাবে রাশেদুলের নাম জুড়ে দেওয়া হয়েছে।"
তিনি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে তার ভাইয়ের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের দাবি জানান এবং বলেন, "আমি বিশ্বাস করি, সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে সত্য প্রকাশ পেলে আমরা এই মিথ্যা মামলা ও হয়রানি থেকে মুক্তি পাব।"
জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত ছানোয়ারুল ইসলাম রাঙা বলেন, "তাহলে আমারও একটা সংবাদ সম্মেলন করা দরকার। আমি এ বিষয়ে একটু আগে একজনের সঙ্গে কথা বলেছি। রাসেল ২০২৩ সালে প্রথমবার আমার কাছে ৬ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এটা শুধু আমি না, এলাকাবাসী সবাই জানে—তাদের বাবা-মা, ভাই-বোনসহ আশেপাশের সবাই। এরপরও সে আবারও একই ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আমি তাকে বারবার অনুরোধ করেছি, কিন্তু সে থামেনি। সে আমার কাছে চাঁদা চেয়েছে—এ সম্পর্কিত প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে।"
তিনি আরো বলেন, "শুধু তাই নয়, আমার বাসায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) এবং রুয়েটের ছাত্রীরা ভাড়া থাকেন। মেয়েরা যখন রুমে পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকে, হালকা পোশাক পরে থাকে (যেমন গেঞ্জি), তখন রাতের অন্ধকারে তারা (রাসেল ও তার পরিবারের সদস্যরা) ছাদ থেকে জানালা দিয়ে ভিডিও করার চেষ্টা করে। এমনকি এসব ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেয়। এসব ঘটনার রেকর্ড আমার কাছে রয়েছে।"