গুড়িয়ে দেয়া হলো আ'লীগ নেতার অবৈধ মিনি চিড়িয়াখানা

ময়মনসিংহ নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যানের অভ্যন্তরে আওয়ামী লীগ নেতার নিয়ন্ত্রণে থাকা মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশু পার্ক গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের ৩ জন ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি দল উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। সেখানে 'কিডস জোন' করার কথা জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, জয়নুল আবেদিন উদ্যানে মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্কের ভূমি ইজারার চুক্তিপত্র বাতিল করে গত ২৬ জুন ইজারাগ্রহীতা মো. সেলিম মিয়াকে চিঠি দেয় সিটি করপোরেশন। চিঠি পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে সেখানকার অবকাঠামো ও পশুপাখি নিজ হেফাজতে সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করা হয়। ইজারাগ্রহীতা সেলিম মিয়া মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমানের শ্যালক।
চলতি বছরের ৮ মার্চ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন মাহবুবুর রহমান। সেলিমের নামে লিজ নেওয়া হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করতেন আওয়ামী লীগ নেতা ও কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান।
২০১৪ সালের ৩০ জুন তৎকালীন পৌরসভা মিনি চিড়িয়াখানাটি ১০ বছরের জন্য ইজারা দেয়। ২০২৪ সালের ৩০ জুন ইজারার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। ৬ লাখ টাকায় চিড়িয়াখানাটি ইজারা দিলেও মেয়াদ শেষ হলেও মাত্র ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা জমা দেওয়া হয়। মিনি চিড়িয়াখানার পাশের জমিটি ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর ১০ হাজার টাকা জমা দিয়ে মাসিক ১ হাজার টাকা ভাড়ায় চুক্তি সম্পাদন করা হয়। এটিও ইজারা দেওয়া হয় সেলিম এন্টারপ্রাইজকে।
দুই শতক জমি ১০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হলেও চুক্তিপত্রে শিশুপার্কের কথা সম্পূর্ণ গোপন রাখা হয় বলে সিটি করপোরেশনের চুক্তি বাতিলের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
একই সঙ্গে নিয়মিত মাসিক ভাড়া না দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছিল, যা চুক্তিপত্রের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন মর্মে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। ওই অবস্থায় ইজারা বাতিল করে মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশু পার্ক অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয় সিটি করপোরেশন।
দুপুর ১২ টার দিকে সিটি করপোরেণের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. সিরাজুল ইসলামসহ ৩ জন ম্যাজিষ্ট্রেট এক সঙ্গে অভিযান চালায়। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, ফায়ার সার্ভিস, আনসার, বন বিভাগের লোকজনও এতে অংশ নেন। এদিন জয়নুল উদ্যান এলাকায় ভ্রাম্যমান দোকানপাটও উচ্ছেদ করা হয়।
শুরুতেই মিনি চিড়িয়াখানায় থাকা প্রাণী গুলোকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে যায় বন বিভাগ। বন বিভাগের ময়মনসিংহে রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার রিদুয়ানুল হক বলেন, চিড়িয়াখানাটি ছিলো অবৈধ। জেলা প্রশাসন এটি উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের কাছে চিঠি পাঠায় এখানে থাকা বন্য প্রাণী গুলো সরিয়ে নিতে। আমরা ৫ টি হরিণ, দুটি ময়ুর, একটি গাধা, কিছু ঘুঘু পাখি, দুটি ইমু পাখি পাওয়া গেছে। বন্যপ্রাণী গুলো সরিয়ে নিয়ে গাজীপুর সাফারি পার্কে অবমুক্ত করা হবে।
সমাজ রুপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘের সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, নগরীতে শিশুদের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল মিনি চিড়িয়াখানাটি। সেটি গুড়িয়ে দেয়ার কারণে বিভিন্ন পশু পাখির সাথে শিশুরা পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি সুন্দর সময় কাটাতে পারতো। যাই হোক সেটি অবৈধ ভাবে পরিচালিত হওয়ায় ভাঙা হয়েছে। আমরা চাই অচিরেই যেন সিটি করপোরেশন শিশুদের বিনোদনের আরেকটি ক্ষেত্র তৈরি করে।
বেলা আড়াইটা পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চলছিল মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্ক। খননযন্ত্র দিয়ে স্থাপনা গুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল। সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুমনা আল মজীদ বলেন, চুক্তির শর্ত ভঙ্গ, অর্থ পরিশোধ না করায় মিনি চিড়িয়াখানা ও পাশের জমিতে করা শিশুপার্কের চুক্তি বাতিল করে উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উচ্ছেদ হওয়া স্থানে শিশুদের জন্য ‘কিডস জোন’ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিশুদের জন্য লাইব্রেরি, খেলনা ও কিছু রাইড থাকবে এবং বাগান করে দেওয়া হবে। শিশুরা সেখানে খেলাধুলা করবে।