ভারতের পার্লামেন্টে উত্তপ্ত বিতর্ক: মোদিকে ‘কাপুরুষ’ বললেন রাহুল, পাল্টা কৃতিত্ব দাবি প্রধানমন্ত্রীর

ভারতের পার্লামেন্টে গত মঙ্গলবারের অধিবেশনে সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত সংঘর্ষ নিয়ে বিজেপি ও বিরোধীদের মধ্যে তীব্র বাকযুদ্ধ এবং কটাক্ষে মুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেখানে সামরিক অভিযানে সাফল্যের দাবি করেন, সেখানে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী তাকে ‘কাপুরুষ’ আখ্যা দিয়ে মোদির পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রবিষয়ক নীতিকে তীব্র সমালোচনার মুখে ফেলেন।
লোকসভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে রাহুল বলেন, “আমাদের এমন একজন প্রধানমন্ত্রী চলবে না, যার সাহস নেই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মিথ্যাবাদী বলতে।”
তার অভিযোগ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিনি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ থামিয়েছেন—কিন্তু মোদি সেই দাবি চ্যালেঞ্জ করতে পারেননি।
রাহুল আরও বলেন, সংঘাতের সময় প্রধানমন্ত্রী মোদি সরাসরি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলার অনুমতি না দিয়ে সেনা ও বিমানবাহিনীকে সীমিত প্রতিক্রিয়ার নির্দেশনা দেন। এমনকি যুদ্ধ শুরুর ৩০ মিনিটের মধ্যে যুদ্ধবিরতির অনুরোধ জানাতে বলা হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী মোদি অবশ্য এসব অভিযোগ এড়িয়ে গিয়ে নিজের বক্তব্যে সামরিক সাফল্যের কৃতিত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “পেহেলগামে ২৬ পর্যটক হত্যার মাত্র ২২ মিনিটের মধ্যে ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে হামলা চালায়।”
তিনি দাবি করেন, “পাকিস্তান আমাদের পরিকল্পনা আঁচ করেই পারমাণবিক হুমকি দিতে শুরু করে, কিন্তু আমরা দমে যাইনি।”
মোদি আরও বলেন, “ভারত এখন নিজের নিয়মে জবাব দেয়—গুলির জবাবে কামান ব্যবহার হবে।” তাঁর মতে, এই সংঘর্ষের মাধ্যমে ভারতের কৌশলগত অবস্থানে বড় পরিবর্তন এসেছে এবং পাকিস্তানের ‘পরমাণু ব্লাফ’ ভেঙে গেছে।
তবে পুরো বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় বিমানবাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কিছু বলেননি। বিরোধীরা জানতে চেয়েছিলেন, কতগুলো যুদ্ধবিমান—বিশেষ করে রাফাল—এই যুদ্ধে হারানো হয়েছে।
রাহুল গান্ধী দাবি করেন, প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ক্যাপ্টেন শিবকুমার ইন্দোনেশিয়ায় এক বৈঠকে স্বীকার করেছেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে বিমানবাহিনী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় কার্যকরভাবে প্রতিরোধ গড়তে পারেনি।
জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ সন্ত্রাসীদের হত্যার ঘটনায় সরকারের অবস্থানকে স্বাগত জানালেও প্রশ্ন তোলেন—এরা কি সত্যিই পেহেলগাম হামলায় জড়িত ছিল?
মোদি জানান, অভিযান চলাকালে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স তাকে একাধিকবার ফোন করেছিলেন। কিন্তু তিনি সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে ব্যস্ত থাকায় ফোন ধরেননি।
বক্তব্যে মোদি বলেন, ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি ভারতের কৃষকদের সঙ্গে অবিচার করেছে। তিনি বলেন, “রক্ত ও পানি একসঙ্গে প্রবাহিত হতে পারে না।”
প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, জাতিসংঘে মাত্র তিনটি দেশ পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছে। তবে ভারতের পক্ষে কয়টি দেশ ছিল, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। রাহুল গান্ধী পাল্টা বলেন, “২২ এপ্রিলের পেহেলগাম হামলার পর একটিও দেশ পাকিস্তানকে প্রকাশ্যে দায়ী করেনি।”