রাশিয়ার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি: বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে তালেবান সরকারের বৈধতা মেনে নিল মস্কো

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) তালেবান সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র গ্রহণ করেছে মস্কো, যার মাধ্যমে স্বীকৃতির আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন।
শুক্রবার (৪ জুলাই) বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য নিশ্চিত করে জানায়, রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তালেবান সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক, নিরাপত্তা ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা আরও গভীর করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, "আমরা কাবুলের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই। নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম এবং মাদকচক্র দমনে আফগান সরকারকে সহায়তা অব্যাহত থাকবে।"
বাণিজ্যিক দিক দিয়ে জ্বালানি, কৃষি, পরিবহন ও অবকাঠামো খাতে সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেছে মস্কো। তাদের ভাষায়, এই স্বীকৃতি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ‘নতুন দিগন্ত’ উন্মোচন করবে।
আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি এক বিবৃতিতে বলেন, "আমরা রাশিয়ার এই সাহসী পদক্ষেপকে বিশেষ মূল্য দিচ্ছি। এটি অন্য দেশের জন্যও একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে।"
২০২১ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বাহিনী হঠাৎ করে আফগানিস্তান ছাড়লে তালেবান কোনো বড় রক্তপাত ছাড়াই দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। তবে সে সময় থেকে আজ পর্যন্ত কোনো দেশই সরকারটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি।
চীন, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও উজবেকিস্তান কাবুলে রাষ্ট্রদূত পাঠালেও তা স্বীকৃতির প্রথম ধাপ হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল, পুরোপুরি নয়। রাশিয়াই প্রথম আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিল।
বিশ্লেষকদের মতে, আফগানিস্তান থেকে ইসলামিক স্টেট (আইএস) এর হুমকি মোকাবেলায় তালেবানকে মিত্র হিসেবে দেখছে মস্কো। গত মার্চে আইএস-এর বন্দুকধারীরা মস্কোর একটি কনসার্ট হলে হামলা চালিয়ে ১৪৯ জনকে হত্যা করে।
মার্কিন গোয়েন্দাদের মতে, এই হামলার পেছনে ছিল আইএস-এর আফগান শাখা আইসিস-কে।
রাশিয়ার দাবি, তারা ২০০৩ সালে তালেবানকে যে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিল, তা ২০২৫ সালের এপ্রিলে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
পশ্চিমা কূটনীতিকরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পথে সবচেয়ে বড় বাধা তালেবান সরকারের নারীবিরোধী নীতিমালা। তারা মেয়েদের হাইস্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা নিষিদ্ধ করেছে। নারীদের চলাফেরা, পোশাক, চাকরি—সব ক্ষেত্রেই নানা ধরনের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে তালেবান শাসকগোষ্ঠী।