বুকে ব্যথা মানেই গ্যাস্ট্রিক নয়— হতে পারে হার্টের রোগের ইঙ্গিত

ভারি খাবার খাওয়ার পর বুকে ব্যথা, অস্বস্তি বা পেট ভার লাগা অনেকের জন্য সাধারণ ঘটনা। বিশেষত যারা অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা অম্বলের সমস্যায় ভোগেন, তাদের ক্ষেত্রে এই উপসর্গ গ্যাস্ট্রিক বলেই ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু সব সময় এই অনুমান ঠিক নাও হতে পারে। চিকিৎসকরা বলছেন, এমন ব্যথার পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে হার্টের গুরুতর সমস্যা।
বিশেষজ্ঞ হৃদরোগ চিকিৎসক ডা. দিলীপ কুমার জানিয়েছেন, “হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগের কারণে হওয়া ব্যথা সাধারণ পেটের গ্যাসের ব্যথার মতোই মনে হতে পারে। তাই একে অবহেলা করা ঠিক নয়।”
হার্টের সমস্যার লক্ষণ কী কী?
১. বুকের মাঝখানে চাপ চাপ ব্যথা, যেন ভারি কিছু চেপে বসেছে
২. ব্যথা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে চোয়াল, ঘাড় বা পিঠে
৩. এই ব্যথা ২০–২৫ মিনিট স্থায়ী হয়
৪. ঘাম, শ্বাসকষ্ট, মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
৫. হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসা
এই লক্ষণগুলোকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘অ্যাঞ্জাইনাল পেইন’। এগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণ নেওয়া জরুরি।
কারা বেশি ঝুঁকিতে?
১. যাদের বয়স ৪০ বছরের বেশি
২. যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত
৩. যাদের আগে থেকে হৃদরোগ আছে
৪. যারা বারবার গ্যাসের ওষুধ খাচ্ছেন, কিন্তু উপশম মিলছে না
ডায়াবেটিস আক্রান্তদের ক্ষেত্রে সমস্যা আরও জটিল, কারণ তাদের ব্যথা বোঝার অনুভূতি (pain perception) অনেক সময় দুর্বল হয়ে যায়। ফলে হার্ট অ্যাটাক হলেও সেটি গ্যাস্ট্রিক বলে ভুল করেন।
কী করবেন এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে?
১. বুকের ব্যথা ও ঘাম দেখা দিলে অবহেলা নয়— সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ হাসপাতালে যান
২. হাতের কাছে ডিসপ্রিন থাকলে ৪টি ট্যাবলেট গুলিয়ে বা চিবিয়ে খেয়ে ফেলুন
৩. এতে মৃত্যুর আশঙ্কা প্রায় ৪০ শতাংশ কমে যেতে পারে
৪. চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই
বুকের ব্যথা মানেই গ্যাস— এই ধারণা খুবই বিপজ্জনক হতে পারে। হার্ট অ্যাটাক নিঃশব্দে আঘাত হানে, আর সেটা শুরু হয় ঠিক এই অবহেলা থেকে। তাই নিজের শরীরের সংকেত বুঝুন, দেরি না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। হৃদয় বিষয়ক ভুলে যেন হার না মানে জীবন।