স্থায়ী সচিব নেই, থমকে গেল এনটিআরসিএর মাধ্যমে অধ্যক্ষ নিয়োগের উদ্যোগ

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ চলছিল। এই লক্ষ্যেই নিয়োগের দায়িত্ব বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত সচিব না থাকায় এই উদ্যোগ আপাতত থমকে গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের মাধ্যমিক-২ শাখার একাধিক কর্মকর্তা জানান, এনটিআরসিএর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগের বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সচিব পদে স্থায়ী কেউ না থাকায় সেটি আর অনুষ্ঠিত হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) মো. মিজানুর রহমান বলেন, “এনটিআরসিএর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগ নিয়ে আমাদের একটি সভা হওয়ার কথা ছিল। তবে সিনিয়র সচিব প্রত্যাহার হওয়ায় সেই সভা করা সম্ভব হয়নি। নিয়মিত সচিব আসার পর সভা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
বর্তমানে দেশের বেসরকারি স্কুল-কলেজে প্রধান শিক্ষক কিংবা সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হয় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে। এই ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন ধরেই স্বজনপ্রীতি, পক্ষপাত ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠে আসছে। ফলে একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রক্রিয়ার দাবিতে শিক্ষক সমাজে ব্যাপক প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল।
একজন নিবন্ধিত তরুণ শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “প্রতিষ্ঠানের প্রধান হওয়ার মতো পদগুলো এখনো ম্যানেজিং কমিটির হাতে। সেখানে গেলে অর্থ আর প্রভাবই মুখ্য হয়ে ওঠে। এনটিআরসিএ দায়িত্ব নিলে অন্তত একটা স্বচ্ছতার আশা ছিল, কিন্তু সেটাও থমকে গেছে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সঠিক নেতৃত্বের অভাবে শিক্ষার মান ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান প্রধানের নিয়োগ প্রশ্নবিদ্ধ হলে গোটা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসন ও শিক্ষাব্যবস্থার ওপর তার প্রভাব পড়ে।
এক শিক্ষানীতিবিদের মতে, “যে পদগুলোতে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা, সেখানে যদি অযোগ্য বা অনৈতিক প্রক্রিয়ায় কেউ বসেন, তাহলে শিক্ষার উন্নয়নের যে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি, সেটি চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হবে।”
তরুণ নিবন্ধিত শিক্ষকরা বলছেন, তারা বছরের পর বছর অপেক্ষা করছেন উপযুক্ত ও স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য। এনটিআরসিএর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগের উদ্যোগে আশার আলো দেখলেও এখন তা আবারও অনিশ্চয়তায় ঢাকা পড়েছে।