ময়মনসিংহে ক্লিনিকের অব্যবস্থাপনায় গর্ভের শিশুর মৃত্যু, পুলিশ হেফাজতে ৩

ময়মনসিংহ নগরীর হেলথ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতালে অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার কারণে গর্ভের শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হলে হাসপাতালের মালিক-ম্যানেজারসহ ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩ জনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) দুপুর ১টার দিকে এই অভিযান চালিয়েছে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ।
তারা হলেন- হাসপাতালের মালিকার অংশিদার রঞ্জণ দে, মো: পাপ্পু এবং ম্যানেজার মো: মজিবুর রহমান। বর্তমানে তারা কোতায়ালি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
এর আগে গত ৩ আগস্ট সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর ব্রাহ্মপল্লী রোডস্থ হেলথ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার কারণে এই শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো থানায় এনিয়ে কোন অভিযোগ দায়ের হয়নি।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: শিবিরুল ইসলাম জানান, গত ২ আগস্ট গর্ভবর্তী রোগীটিকে জামালপুর হাসপাতাল থেকে রেফার্ড করা হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রের্ফাড করে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। কিন্তু রোগীটি ময়মনসিংহ আসলে মো: হান্নান নামের এক দালাল এই রোগীটিকে ফুসলিয়ে ওই হাসপাতালে নিয়ে আসে। কিন্তু তখন ওই হাসপাতালে ডাক্তার না থাকার কারণে রোগীটি প্রায় আড়াই ঘন্টা অপেক্ষা করে বেরিয়ে যেতে চায়। এ সময় হাসপাতালের মালিক পক্ষ লিফট বন্ধ করে দেয়। এ সময় রোগীটিকে সিড়ি বেয়ে নামাতে গেলে পড়ে যায়। এতে গর্ভবর্তী মা জরায়ুতে আঘাতপপ্রাপ্ত হয়ে মারাত্মক রক্তক্ষরণ হয়। পরবর্তীতে গর্ভের শিশুটি মারা যায়।
ওসি আরও জানান, হাসপাতালটিতে ব্যাপক অব্যবস্থাপনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাছাড়া এই প্রতিষ্ঠানটি অবৈধ। এ কারণে ঘটনাটি জানার পর সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এটি বন্ধের নির্দেশনা জারি করেছেন। এ ঘটনায় আমরা হাসপাতালের মালিক-ম্যানেজারসহ ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে রেখেছি। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এখনো ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
তবে হাসপাতালটির আয়া সুইটি আক্তার বলেন, রোগীটি জামালপুর হাসপাতাল থেকে রেফার্ড করা হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রের্ফাড করে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। কিন্তু এই হাসপাতালের সাবেক ম্যানেজার মো: হান্নান রোগীটিকে এখানে নিয়ে আসে। তখন ডাক্তার ছিল না। এ সময় রোগীর মারাত্মক রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। পরে রোগীর স্বজনরা লিফট বন্ধ থাকার কারণে ২ তলা থেকে রোগীকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে সিড়ি দিয়ে নিচে নিয়ে বেরিয়ে যায়। একাজে আমিও তাদের সহযোগীতা করেছি।
এবিষয়ে জানতে গর্ভবর্তীর নারীর স্বামী ও ময়মনসিংহ নগরীর ২ নম্বর পুলিশ ফাঁড়ির এস.আই লুৎফর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি রোগীর কাছে ব্যস্ত আছি, পরে কথা বলব। এরপর আরও কয়েকবার তাকে ফোন করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
তবে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও হাসপাতালটির মালিক পক্ষের কারো বক্তব্য জানা যায়নি। এমনকি সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়েও দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি।
হাসপাতাল বন্ধের নোটিশ জারি করেছে সিভিল সার্জন, তদন্ত কমিটি গঠিত এ ঘটনায় হাসপাতাল বন্ধের নোটিশ জারি করেছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. সাইফুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে প্রতিষ্ঠানের নথিপত্র যাচাই বাছাই করা হয়েছে। এতে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের লাইসেন্স পাওয়া গেলেও অনেক ত্রু টি রয়েছে। অনেকদিন ধরে এই হাসপাতালটি নিয়মবহির্ভূত ভাবে পরিচালিত হয়ে আসছিল। যা প্রাইভেট হাসপাতাল পরিচালনার পরিপন্থি।
এদিকে এ ঘটনার অনুসন্ধানে ৩ সদস্যেও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. মো. সাইফুল ইসলাম খান। তিনি আরও জানান, ঘটনাটি তদন্তের জন্য ইতোমধ্যে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপেটি না পাওয়া পর্যন্ত হেলথ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতাল বন্ধ রাখার জন্য নিদের্শ দেয়া হয়েছে। তবে তদন্ত কমিটির সদস্যদের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি।