২০২৬ সাল পর্যন্ত চাপেই থাকবে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত: এসঅ্যান্ডপি

আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থা এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংস পূর্বাভাস দিয়েছে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত ২০২৬ সাল পর্যন্ত চাপের মুখে থাকবে। সংস্থাটির মতে, ব্যাংক খাতের দীর্ঘদিনের কাঠামোগত দুর্বলতা, সম্পদের মানের অবনতি এবং লাভজনকতায় ঘাটতির কারণে এই চাপ সহজে কাটবে না।
২০২৫ সালের মধ্যবর্তী পর্যালোচনায় এসঅ্যান্ডপি উল্লেখ করেছে, ব্যাংকিং খাতে উচ্চ ঋণঝুঁকি, বিচ্ছিন্ন ও খণ্ডিত কার্যক্রম এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ও কিছু ইসলামি ব্যাংকের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে খাতটির স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হচ্ছে। এর ফলে পুরো আর্থিক ব্যবস্থায় আস্থার ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।
এসঅ্যান্ডপির তথ্য অনুযায়ী, বেশ কিছু ইসলামি ব্যাংক বর্তমানে তারল্য সংকটে রয়েছে, পাশাপাশি বহু ব্যাংকই মূলধন ঘাটতিতে ভুগছে। এই সংকট পুরো খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, দুর্বল ঋণ বিতরণ নীতি এবং অকার্যকর দখল আইন এখনও বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক এখনও দুর্বল মানের সম্পদ বহন করছে। পুরোনো ঋণের নবায়নে জটিলতা, পুনঃতফসিল করা ঋণের বিপরীতে বাড়তি খেলাপি এবং ঋণগ্রহীতাদের নগদ প্রবাহ সংকট ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এসঅ্যান্ডপি জানিয়েছে, ব্যাংক খাতকে শৃঙ্খলায় আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের শ্রেণিকরণে কঠোরতা, ঋণ নবায়নে কঠিন শর্ত আরোপ এবং ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি সংক্রান্ত সংজ্ঞা আরও স্পষ্ট করা।
এসব পদক্ষেপ স্বল্পমেয়াদে কিছু ব্যাংকের জন্য চাপ তৈরি করলেও দীর্ঘমেয়াদে এতে স্বচ্ছতা ও নিয়মানুবর্তিতা বাড়বে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, মূল্যস্ফীতির চাপে খেলাপি ঋণ বাড়তে পারে, তবে বাজারভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থার কারণে ব্যাংকগুলোর সুদ-ভিত্তিক আয় কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী বছরগুলিতে তুলনামূলকভাবে উচ্চ সুদের হার বজায় থাকলে, যদিও ঋণের চাহিদা কমবে, তবুও নেট ইন্টারেস্ট মার্জিন উন্নত হতে পারে।
এসঅ্যান্ডপির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, কাঠামোগত দুর্বলতা দূর না হলে এবং ব্যাংকিং খাতে শাসনব্যবস্থায় জবাবদিহি নিশ্চিত না হলে স্থিতিশীলতা ফিরে আসা কঠিন। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।