ডলার ও বন্ডের সুদ বেড়েছে, চাপের মুখে ইয়েনসহ বৈশ্বিক মুদ্রাবাজার

আজ বুধবার (১৬ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রে ডলারের মান ও সরকারি বন্ডের সুদের হার একসঙ্গে বেড়েছে, যার ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে জাপানি ইয়েনের ওপর, যেটির মান ডলারের বিপরীতে চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।
সাম্প্রতিক মূল্যস্ফীতির তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর শুল্কনীতির প্রভাব বাজারে ধীরে ধীরে প্রতিফলিত হচ্ছে। জুন মাসে কফি, সাউন্ড সিস্টেম, আসবাবসহ নানা আমদানিনির্ভর পণ্যের দাম বেড়েছে, যা সামগ্রিক মূল্যস্ফীতিতে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে।
এই প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগকারীদের ধারণা, এ বছর আর ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার কমাবে না। এর ফলেই ডলারের দাম ও দীর্ঘমেয়াদি বন্ডের সুদ উভয়ই বেড়ে গেছে। ১০ বছর মেয়াদি মার্কিন সরকারি বন্ডের সুদ বেড়ে এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ৪৯৫ শতাংশে পৌঁছেছে। দুই বছর মেয়াদি বন্ডের সুদও বেড়ে ৩ দশমিক ৯৫ শতাংশের কিছু ওপরে উঠেছে।
জাপানি ইয়েনের মান রাতারাতি কমে গেছে। প্রতি ডলারে এখন ১৪৯ দশমিক ০৩ ইয়েন পাওয়া যাচ্ছে, যা গতকাল ছিল ১৪৮ দশমিক ৯০। এই পতনের ফলে ইয়েন এখন চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে।
ইউরো ও ব্রিটিশ পাউন্ডের অবস্থানও দুর্বল। টানা দুই দিন এই দুই মুদ্রার মান তিন সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে অবস্থান করছে। ইউরোর মান ১ দশমিক ১৬০৮ ডলার এবং পাউন্ডের মান ১ দশমিক ৩৩৯৪ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্ববাজারে প্রধান ছয়টি মুদ্রার বিপরীতে ডলারের শক্তিমানের সূচকও বেড়েছে। ডলার ইনডেক্স এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯৮ দশমিক ৬০–এর কাছাকাছি পৌঁছেছে।
অস্ট্রেলিয়ান ডলার এবং নিউজিল্যান্ডের ডলারেও ওঠানামা দেখা গেছে। গতকাল অস্ট্রেলিয়ান ডলারের মান ০.৪৫ শতাংশ কমলেও আজ সকালে তা কিছুটা বেড়ে ০.৬৫১৭ ডলারে দাঁড়িয়েছে। নিউজিল্যান্ড ডলারের মান বেড়েছে ০.১৭ শতাংশ।
বাজারে এখন আরেকটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে ফেডের নেতৃত্ব পরিবর্তনের সম্ভাবনা। ধারণা করা হচ্ছে, যদি ফেডারেল রিজার্ভের বর্তমান চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের স্থানে এমন কেউ আসেন যিনি সুদহার কমানোর পক্ষে, তবে ডলারের মান আরও বাড়তে পারে। দীর্ঘদিন ধরেই ট্রাম্প ফেড ও পাওয়েলের সমালোচনা করে আসছেন। সম্প্রতি ফেডের সদর দপ্তরের সংস্কার প্রকল্পে ২৫০ কোটি ডলারের ব্যয় নিয়ে ট্রাম্প তীব্র সমালোচনা করেন।
ফেডের ওপর ট্রাম্পের এই চাপের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নেতৃত্ব পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
এদিকে বাণিজ্য নিয়েও ট্রাম্প নতুন বার্তা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে এবং আরও কয়েকটি বাণিজ্যচুক্তি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া ছোট দেশগুলোকে শিগগিরই ১০ শতাংশের কিছু বেশি হারে শুল্ক আরোপের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হবে।