ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন: করদাতার প্রথম ধাপ ও প্রয়োজনীয় সব তথ্য একসঙ্গে

করদাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশের প্রথম ধাপ হচ্ছে ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে ইলেকট্রনিক ট্যাক্সপেয়ার আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (e-TIN) সার্টিফিকেট সংগ্রহ করার পর থেকেই একজন ব্যক্তির জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়—যদিও কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম আছে।
শুধু চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ীদের জন্য নয়, সরকারি-বেসরকারি ৫০টিরও বেশি পরিষেবার জন্য এখন টিআইএন প্রয়োজন। নিচে জানা যাক, কোথায় কোথায় এটি বাধ্যতামূলক:
যেসব ক্ষেত্রে টিআইএন প্রয়োজন
ব্যবসা ও পেশাজীবীদের জন্য:
ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া বা নবায়ন, ঋণপত্র স্থাপন, রপ্তানি নিবন্ধন, দরপত্র জমা, অভিজাত ক্লাবের সদস্যপদ গ্রহণ, বিমা জরিপ প্রতিষ্ঠানের সদস্য, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, হিসাববিদদের পেশাজীবী সংগঠন সদস্য, ড্রাগ লাইসেন্স গ্রহণ, বিবাহ নিবন্ধনকারী/কাজি, কোম্পানির পরিচালক বা স্পনসর শেয়ারহোল্ডার ইত্যাদি।
সম্পত্তি ও যানবাহনের ক্ষেত্রে:
জমি-ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন, মোটরসাইকেল, বাস, ট্রাকের মালিকানা হস্তান্তর ও ফিটনেস নবায়ন।
ব্যক্তি পর্যায়ে:
বিদ্যুৎ সংযোগ, মোবাইল ব্যাংকিং ও রিচার্জ ব্যবসা, আমদানি-রপ্তানির বিল অব এন্ট্রি, ক্যাটারিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, সিকিউরিটি সার্ভিস ইত্যাদি।
প্রতিনিধি নির্বাচনে:
জাতীয় সংসদ, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে।
শিক্ষা ও আর্থিক খাতে:
ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ে সন্তানকে পড়ালে, ৫ লাখ টাকার বেশি ব্যাংক ঋণ, সঞ্চয়পত্র ক্রয়, ক্রেডিট কার্ড, বাণিজ্যিক গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ, সমবায় সমিতি রেজিস্ট্রেশন।
অনলাইন ইনকাম:
ফ্রিল্যান্সিং, ইউটিউব, ফেসবুক কিংবা রাইড শেয়ারিং (উবার/পাঠাও)-এ অংশ নিতে হলেও টিআইএন বাধ্যতামূলক।
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য টিআইএন বাধ্যতামূলক কাদের?
সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মকর্তা বা এমপিওভুক্ত শিক্ষক, যাদের মূল বেতন ১৬ হাজার টাকার বেশি।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও করযোগ্য আয় থাকলে শুধু টিআইএন নয়, আয়কর রিটার্নও জমা দিতে হয়।
কীভাবে আবেদন করবেন ই-টিআইএন সার্টিফিকেটের জন্য?
বর্তমানে টিআইএন পেতে কর অফিসে যেতে হয় না। বাসা থেকেই অনলাইনে আবেদন করা যায়। এজন্য যেতে হবে:
https://secure.incometax.gov.bd/TINHome
আবেদন করতে যা লাগবে:
জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (NID)
পাসপোর্ট (প্রবাসীর ক্ষেত্রে)
মোবাইল নম্বর (বায়োমেট্রিক ভেরিফায়েড)
আবাসিক ঠিকানা, জেলা ও বিভাগ
ধাপে ধাপে আবেদন প্রক্রিয়া:
ধাপ ১:
ওয়েবসাইটে গিয়ে Register অপশনে ক্লিক করুন।
নতুন ব্যবহারকারী হিসেবে User ID ও Password তৈরি করতে হবে।
ধাপ ২:
একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।
ইংরেজিতে User Name, Password দিয়ে Security Question বেছে রাখতে হবে (যেমন: আপনার গ্রামের নাম, প্রিয় রঙ ইত্যাদি)।
এই তথ্য পরবর্তীতে পাসওয়ার্ড রিসেটের জন্য কাজে আসবে।
ধাপ ৩:
রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে লগইন করে করদাতার ধরন, আয়ের উৎস, পেশার ধরন, কার্যস্থল/প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা ইত্যাদি তথ্য দিন।
ধাপ ৪:
এবার ব্যক্তিগত তথ্য (জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, পিতামাতা’র নাম, মোবাইল নম্বর, স্থায়ী-বর্তমান ঠিকানা ইত্যাদি) পূরণ করুন।
সতর্ক থাকুন—তথ্য যেন ভুল না হয়, নচেত ভবিষ্যতে জটিলতা হতে পারে।
সব তথ্য দেওয়ার পর আবেদন সাবমিট করুন। এরপর আপনার ই-টিআইএন সার্টিফিকেট প্রিন্ট বা সংরক্ষণ করা যাবে।