যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫% শুল্কে বড় ঝুঁকিতে বাংলাদেশে পোশাক রপ্তানি: ব্যবসায়ীদের কূটনৈতিক সমঝোতার আহ্বান

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণায় দেশজুড়ে তৈরি পোশাক খাতে ব্যাপক উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে। শিল্প মালিকরা বলছেন, এই উচ্চ শুল্ক কেবল আরএমজি খাত নয়, চট্টগ্রাম বন্দর, ব্যাংকিং খাত ও এক্সেসরিজ শিল্পসহ সংশ্লিষ্ট সব খাতকে বড় ধরনের বিপদে ফেলবে।
বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি ও কেডিএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম রহমান জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক আলোচনায় শিল্প খাতকে সম্পৃক্ত না করেই এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা হতাশাজনক।
তিনি বলেন, “বিশ্ববাণিজ্য এখন অত্যন্ত প্রাইস সেনসেটিভ। আমাদের ওপর ৩৫% শুল্ক আরোপ করা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের ওপর এই শুল্ক মাত্র ২০%। এটা গুরুতর বৈষম্য।”
সেলিম রহমান আরও বলেন, “বর্তমানে কিছুটা সামাল দেওয়া গেলেও ভবিষ্যতে বড় ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। আমাদের রপ্তানির ৪০% মার্কিন বাজারনির্ভর। এখনই বিকল্প বাজার খোঁজা ছাড়া উপায় নেই।”
সংশ্লিষ্ট সব খাতে প্রভাব পড়বে: চট্টগ্রামের নেতার শঙ্কা
চট্টগ্রামে পোশাক খাতের শীর্ষস্থানীয় উদ্যোক্তা, এশিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং বিজিএমইএ নেতা আবদুস সালাম বলেন, “ক্রেতারা কেন বেশি দামে বাংলাদেশে অর্ডার দেবে, যখন ভিয়েতনাম বা ভারতেই তারা সস্তায় পাচ্ছে? এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম হ্রাস পাবে, ব্যাংকিং খাত দুর্বল হবে, এক্সেসরিজ ও পরিবহন খাতেও ধস নামবে।”
তিনি সরকারকে দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসে শিল্প প্রতিনিধিদের যুক্ত করার আহ্বান জানান।
কূটনৈতিক প্রচেষ্টা শুরু, তবে পর্যাপ্ত নয়
সেলিম রহমান জানান, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রে আলোচনায় অংশ নিচ্ছে।
“এই প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই। তবে বিষয়টি বাস্তবতা ও প্রতিযোগিতা বিবেচনায় দ্রুত সমাধান দরকার।”
তিনি আরও বলেন, “ভবিষ্যতে এ ধরনের আলোচনায় শিল্প খাতের মূল স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ত করতে হবে। না হলে টেকসই বাণিজ্য নীতিমালা সম্ভব নয়।”
হুমকির মুখে কয়েক হাজার রপ্তানিকারক
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২,৩৭৭টি প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে ৮০১টি প্রতিষ্ঠান তাদের অর্ধেক রপ্তানি এই এক দেশেই করে। এ শুল্কে এ প্রতিষ্ঠানগুলো প্রত্যক্ষভাবে ঝুঁকির মুখে পড়বে।
প্রসঙ্গত, গত অর্থবছরে বাংলাদেশের আরএমজি রপ্তানি ছিল ৭৫৯ কোটি ডলার, যার একটি বড় অংশ গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, এই শুল্ক কার্যকর হলে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিতে বড় ধরনের পতন ঘটবে এবং দেশীয় শিল্প ও অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।