২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের পর বাংলাদেশ অর্থনীতির ইতিবাচক পরিবর্তন

২০২৪ সালের ‘জুলাই আন্দোলন’ দেশের অর্থনীতিকে স্থবিরতা থেকে উত্তোলন করে নতুন গতি দেয়। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের এক বছর পেরিয়ে অর্থনীতির নানা সূচকে ইতিবাচক অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে বিনিয়োগ ও ব্যাংক খাতে এখনও কিছু উদ্বেগ রয়ে গেছে।
২০২৪ সালের জুনে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নেমে এসেছিল দশকের সর্বনিম্ন ১৯.৮ বিলিয়ন ডলারে। এরপর সরকার রেমিট্যান্স প্রণোদনা বাড়ানো এবং হুন্ডি প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নিলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে ৩০.২১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর ফলে রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১.৬৮ বিলিয়ন ডলারে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের নেতৃত্বে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি ও তথ্য প্রকাশে বাজারে আস্থা ফিরে এসেছে। তবে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, অর্থ পাচারের পুরনো কৌশল আবার চালু হলে সংকট ফিরে আসতে পারে।
বিশ্ববাজারে ডলারের দাম কমায় ও রিজার্ভ বাড়ায় মুদ্রাবাজারে চাপ কিছুটা কমেছে। এলসি নিষ্পত্তি ও ব্যাংক এক্সচেঞ্জ রেটে স্থিতিশীলতা এসেছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের রফতানি ৮.৫৮% বৃদ্ধি পেয়ে ৪৮.২৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, যার বড় অংশ এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। তবে জুনে রফতানি আয়ে কিছু হ্রাস উদ্বেগের কারণ।
মধ্য ২০২৪ সালে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১২% ছাড়িয়েছিল, যা সরকারী উদ্যোগে কমে বর্তমানে ৮.৪৮% (২০২৫ সালের জুনে) হয়েছে, প্রায় তিন বছরের সর্বনিম্ন। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতিও ৭.৩৯% নেমে এসেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর ব্যবস্থাকে সহজ, স্বচ্ছ ও ডিজিটাল করতে দ্রুত তথ্যপ্রযুক্তি গ্রহণ করেছে। ‘a‑Chalan’ প্ল্যাটফর্মসহ বিভিন্ন অনলাইন সেবা চালু হয়েছে।
ড. আহসান এইচ মনসুরের নেতৃত্বে দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ, লোপাট তদন্ত, একক বিনিময় হার, স্বচ্ছতা বৃদ্ধি ও আইনি সংস্কারসহ পাঁচ বড় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ঝুঁকিভিত্তিক তদারকিও চালু হয়েছে।
তবে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি এখনও ৭% এর নিচে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম। ঋণখেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় এক-চতুর্থাংশে পৌঁছেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক পরিবেশে উন্নতি না হলে বিনিয়োগ ও ঋণ প্রবৃদ্ধি আশা মতো বাড়বে না।