ইসলামি ব্যাংক খাতে আমানত ও বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধিতে চরম ধস

দেশের ইসলামি ব্যাংক খাতে আমানত ও বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে আমানত প্রবৃদ্ধি কমে মাত্র ০.৮০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা বিগত বছরের তুলনায় এক তৃতীয়াংশেরও কম। বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধিও কমে এসেছে ৯.৯৬ শতাংশে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১ শতাংশ পয়েন্ট কম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আর্থিক অস্থিরতা, সুশাসনের অভাব এবং ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ইসলামি ব্যাংকগুলোর প্রতি গ্রাহকদের আস্থা কমিয়ে দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে আমানত ও বিনিয়োগে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংক রয়েছে। এ ছাড়া ১৬টি প্রচলিত ব্যাংকের ইসলামি ব্যাংকিং শাখা এবং ১১টি ইসলামি উইন্ডো রয়েছে। তবে ২০২৪ সালের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এসব ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা ও অনিয়মগুলো আরও দৃশ্যমান হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিকে ইসলামি ব্যাংকগুলোর বার্ষিক আমানত প্রবৃদ্ধি ছিল ১১.৭১%। ২০২৩ সালে তা নেমে আসে ৩%-এ এবং ২০২৪ সালে কিছুটা বেড়ে ৬.৭৫% হলেও, চলতি বছরে তা আবার কমে যায়।
বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও একই ধারা দেখা গেছে। ২০২৩ সালে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪%, যা ২০২৪ সালে কমে ১০.৮২%-এ দাঁড়ায় এবং এবার তা আরও কমে ৯.৯৬%-এ এসেছে।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, ২০১৭ সাল থেকেই ব্যাংকটি সুশাসনের বিচ্যুতির মধ্যে পড়ে। এর প্রভাব পড়ে আমানতকারীদের আস্থার ওপর, যা ব্যাংকটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের এমডি শফিউজ্জামান বলেন, “আমানত কমার হার এখন পরিচালনাযোগ্য পর্যায়ে আছে। গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক কিছুটা কেটেছে, তবে পূর্ণ আস্থা ফিরে পেতে সময় লাগবে।”
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন জানান, “২০২৪ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অনেক ব্যাংকের প্রকৃত আর্থিক চিত্র উন্মোচিত হয়। বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার ও বেআইনি লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।”
তিনি বলেন, “এতে আমানতকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং তারা অর্থ তুলে নেয়। তবে এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হলেও আস্থার সংকট এখনো রয়ে গেছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ বা কার্যক্রম হ্রাস পাওয়ায় ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ কমেছে। এর প্রভাব সরাসরি পড়েছে আমানত ও বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধিতে।
অর্থনীতিবিদ ড. আহসান হাবিব বলেন, আগ্রাসী ঋণ নীতির কারণে ২০২১ থেকে অনিয়মের শিকারে পড়ে ইসলামি ব্যাংক খাত। “বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিলেও, অনেক অনিয়ম আগেই গভীরভাবে প্রোথিত ছিল,”—বলেন তিনি।