সঞ্চয়পত্রের সুদহারে ছাঁট: আইএমএফ শর্তে চাপ বাড়ছে ব্যাংক খাতে

সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে লাগাম টেনেছে। কমানো হয়েছে সুদহারও। বিশ্লেষকদের মতে, এতে সরকারের ব্যাংকনির্ভরতা বাড়বে, যার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বেসরকারি ঋণ, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ওপর।
সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানোয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মধ্যবিত্ত, পেনশনার ও বয়স্ক নাগরিকরা। এই শ্রেণির অনেকেই সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর নির্ভর করতেন সংসার চালাতে। এখন তারা বিকল্প খুঁজতে বাধ্য হচ্ছেন।
সাবেক সিনিয়র অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, “অনেকে সঞ্চয়পত্রের আয়েই সংসার চালান। সুদ কমানোয় তারা সমস্যায় পড়বেন। বরং ব্যাংক ঋণের চেয়ে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়া সরকারের জন্য ভালো।”
অর্থনীতিবিদ এম কে মুজেরী বলেন, “সঞ্চয়পত্রের আকর্ষণ হারাচ্ছে। মধ্যবিত্তদের সঞ্চয় ঝুঁকিতে পড়ছে। প্রাইজবন্ডের মতো সঞ্চয়পত্রও দিনদিন মানুষের কাছে অনাকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।”
সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ধারাবাহিক লক্ষ্যমাত্রা হ্রাস
আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ কমাতে সরকার চলতি অর্থবছরে বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নামিয়ে এনেছে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকায়, যা তিন অর্থবছর আগেও ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা।
অর্থবছর বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা (কোটি টাকা)
২০২২–২৩ ৩৫,০০০
২০২৩–২৪ ১৮,০০০
২০২৪–২৫ ১৫,৪০০
২০২৫–২৬ ১২,৫০০ (বর্তমান)
সঞ্চয়পত্রে ছয় মাসের গড় ট্রেজারি বিলের সুদহারের ভিত্তিতে নতুন সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে।
সাড়ে ৭ লাখ টাকার নিচে: ১২.৫৫% → ১১.৮২%
সাড়ে ৭ লাখ টাকার উপরে: ১২.৩৭% → ১১.৭৭%
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ না বাড়লে বাজেট ঘাটতি পূরণে সরকারের ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভরতা বাড়বে। বিশ্লেষকদের মতে, এতে বেসরকারি খাতে ঋণ সংকুচিত হবে এবং বিনিয়োগহ্রাস ঘটতে পারে।
চলতি বাজেটে ব্যয় সংকোচনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে। এমন প্রেক্ষাপটে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো অর্থনৈতিকভাবে ‘সাংঘর্ষিক’ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
সঞ্চয়পত্রে উচ্চ সুদ দিলে বন্ড মার্কেট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে বেসরকারি কোম্পানিগুলো বন্ড ছাড়তে আগ্রহ হারায়। সরকার চাইছে বন্ড মার্কেট বিকাশের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন উৎস তৈরি করতে।
সরকার যদি সঞ্চয়পত্রকে সামাজিক নিরাপত্তা বলেই ধরে নেয়, তাহলে সেই শ্রেণির মানুষদের জন্য বিকল্প কী? ব্যাংকের উচ্চ সুদ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য নয়। ফলে পেনশন সুবিধা বাড়ানোসহ নতুন সামাজিক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গড়ার তাগিদ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা।