রাবিতে ‘বিজয় ফিস্টে’ অব্যবস্থাপনার অভিযোগ, অসুস্থ শতাধিক শিক্ষার্থী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ উপলক্ষে আয়োজিত ‘বিজয় ফিস্ট’-এ অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে। এই আয়োজনে দেওয়া খাবার খেয়ে শতাধিক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছেন বলে জানা গেছে।
গত মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) খাবার খাওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হওয়া শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলগুলোতে অসুস্থ হলেও সবচেয়ে বেশি অসুস্থ হয়েছেন বিজয়-২৪ হলের শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্র এবং শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, খাবার খাওয়ার পর থেকেই অসুস্থ হতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী পেটের পীড়ার চিকিৎসা নিতে গিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আগের রাতে রান্না করা খাবার পরিবেশন করা হয়, যা ছিল খুবই নিম্নমানের। এছাড়াও খাবারে চুল, পোকা এবং মুরগির অপ্রয়োজনীয় অংশ পাওয়া গেছে। দুপুরে খাবার খাওয়ার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের পেট ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া, বমি, এবং মাথা ঘোরানোর মতো সমস্যা দেখা দেয়।
বিজয়-২৪ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, খাবার খাওয়ার কিছুক্ষণ পরই পেটে গ্যাসের সমস্যা শুরু হয়। খাবারের অর্ধেক খাওয়ার পরই শরীরে অস্বস্তি অনুভব করায় বাকি অংশ আর খাওয়া সম্ভব হয়নি এবং তা ফেলে দিতে হয়। এর কিছুক্ষণ পর থেকেই পেটে ব্যথা অনুভব করি।
হলের আরেক শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, বিজয় ফিস্ট উপলক্ষে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া খাবার খাওয়ার পর হলের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। খাবার খাওয়ার পর অনেকের পেট ব্যাথা, পেট ফুলে যাওয়া, বমি, মাথা ঘোরানোসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিয়েছে।
এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য হলের শিক্ষার্থীরাও খাবারের মান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা জানান, প্রশাসন ৫০ টাকা নিয়ে যে খাবার দিয়েছে, তার মান খুবই নিম্নমানের ছিল।
শহীদ জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রবিউর রহমান বলেন, প্রশাসন থেকে যে খাবার দেওয়া হয়েছিল, তা এতটাই নিম্নমানের ছিল যে ক্যান্টিনের খাবারও তার চেয়ে ভালো। খাবার এতটাই খারাপভাবে রান্না করা হয়েছিল যে তা না খেয়েই ফেলে দিতে হয়েছে।
শহীদ শামসুজ্জোহা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আরহাদ আহমেদ হলের খাবার ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, বিশেষ খাবারের জন্য নির্ধারিত ৫০ টাকা নেওয়া হলেও খাবারের মান ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের। যে রোস্ট দেওয়া হয়েছিল তা ছিল খুবই ছোট, শুকনো এবং ভালোভাবে সিদ্ধ হয়নি।
তিনি প্রশাসনের বিরুদ্ধে খাবারের বাজেট থেকে টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ তোলে বলেন, এই খাবারের জন্য ১৫০ টাকা বাজেট থাকা সত্ত্বেও মনে হয় ১০০-১১০ টাকাও খরচ হয়নি।
রাবি চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রধান মাফরুহা সিদ্দিকা লিপি বলেন, “সাধারণত আমাদের চিকিৎসা কেন্দ্রে গড়ে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী চিকিৎসাসেবা নিতে আসে। তবে আজকে পেটের নানা সমস্যার কারণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থীরা চিকিৎসা নিতে এসেছেন। এখন পর্যন্ত সকালের শিফটেই প্রায় চার শতাধিক শিক্ষার্থী সেবা নিতে এসেছেন।”
এবিষয়ে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক ও বিজয় -২৪ হলের প্রাধ্যক্ষ জামিরুল ইসলাম বলেন,“কি কারণে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়েছে সেই সমস্যা চিহ্নিত করতে আমরা কাজ করছি। সমস্যা খুঁজে পেলে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।”
উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, যেসকল শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছে তাদের চিকিৎসার ব্যাবস্থা করা হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রাধ্যক্ষদের কাছে এই অব্যবস্থাপনার কারণ জানা হবে।